সম্পাদকের মননে
'বাজল তোমার আলোর বেণু' --------- মহুয়া ঘোষ 'বাজল তোমার আলোর বেণু'
বাঙালীর সমস্ত মজ্জায়, অস্থিতে,চেতনায়, জড়িয়ে আছে যে গান.... সে গান অন্যবার মহালয়ার প্রত্যুষে বেতার থেকে সম্প্রচারিত হওয়ার পর পরই আমরা দিন গুনতাম আর মাত্র সাতদিন পরেই মা দূর্গা তাঁর সন্তানদের নিয়ে মর্ত্যে অবতীর্ণ হবেন!
কিন্তু এবার সেই হিসেব মিলল না। এই প্রথমবার আমরা আশ্বিনে মহালয়া শুনে কার্ত্তিকে মা'য়ের আরাধনায় সামিল হব।
'করোনা' এখন এমন একটা নাম যা সারা পৃথিবীর সমস্ত তাবড় তাবড় দেশকেও তার কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য করেছে যেমন বাধ্য করেছিল মহিষাসুরকে মা' দূর্গার শক্তির কাছে হার মানতে।
তবে, মানুষ কিন্তু শেষপর্যন্ত্য রুখে দাঁড়িয়েছে তার সমস্ত ইচ্ছাশক্তিকে প্রয়োগ করে এই ভয়ঙ্কর অসুররূপী ভাইরাসকে বধ করে এক মহামন্ত্র বীজ বপণ করতে, যে বীজে রয়েছে এক নতুন ভোরের আগমন বাণী..... এক নতুন দিশা.... এক নতুন উন্মোচিত আলোর দিক....যে আলো এতদিন লুকোনো ছিল আমাদের অন্তরে.... আমাদের ভাবনায়.... আমাদের অলস জীবনযাপনে; আমরা যেন জেগে উঠলাম এক নতুন কর্মোদ্যম নিয়ে। পুরাতন 'আমি' কে সরিয়ে এক নতুন 'আমি' হয়ে উঠলাম। লড়তে শিখেছি প্রতি মুহুর্তে, গড়তে শিখেছি নিজেদের এই মুখথুবড়ে পড়া আর্থসামাজিক সময় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে; যে সময় আমাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ঘটালেও আমাদের মানসিক নৈকট্যের কাছে হার মেনেছে তা নাহলে লকডাউন পিরিয়ডে সৃষ্টি হত না 'শ্রীমতির দরবার' বা এই দরবারের মত বহু অনলাইন পোর্টাল ও পত্রিকা যার মধ্য দিয়ে মানুষ আবিষ্কার করেছে তার সৃষ্টিশীলতাকে; রুজিরোজগারের পথ যে বাড়িতে বসেও খনন করা যায় তা ভাবতে শিখিয়েছে আমাদের মুঠোফোন যা এতদিন আমাদের অবসর সময়ে একটি বিনোদন সামগ্রী ছিল।
আজ 'শ্রীমতির কলম' লিখতে গিয়ে বারবার অন্তরাত্মা যেন বলছে শুনতে পাচ্ছি.... "সময়কে স্যালুট করতে শেখো, একদিন সময় তোমাকে স্যালুট করবে।"
এই লকডাউন সময় বুঝিয়ে দিয়েছে... আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা না রাখলে জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে গেলে একে অন্যের হাত ধরে এগোতে হয়। নদী তার চলার পথে বাধা পেলে যেমন তার গতিপথ পাল্টায়, তেমনি আমরাও আজ ঠিক উপায় খুঁজে নিয়েছি এক রোজগারের পথ হারিয়ে অন্য পথ খুঁজে নিতে।
খুঁজে পেয়েছে কোন বৃদ্ধ বাবা মা তাঁদের জীবনের অনাবিল সুখ যখন তাঁদের কৃতী সন্তানেরা বহুদিনের কর্মব্যস্ততার থেকে মুখ তুলে তাঁদের খোঁজখবর নেওয়ার সময় পেয়েছে। কর্মজগতের দায়বদ্ধতা তাদের ভুলিয়ে রাখে; ভুলিয়ে রাখে তাদের শৈশব; আত্মীয় পরিজন ও বহুদিনের স্মৃতিবিজড়িত কিছু মানুষ যারা একসময় আমাদের অশক্ত সময়ে এসে হাত ধরেছিল আমাদের.... আমরা এতদিন আমাদের ব্যস্ততায় ভুলে ছিলাম তাদের... এড়িয়ে থেকেছি মানসিক টানাপোড়েনকে উপেক্ষা করে; লকডাউন পিরিয়ডের বেঁচে থাকা সময় তাদের খোঁজখবর নিয়ে সেই দায়বদ্ধতা মেটাতে আমাদের হাত ধরেছে।
মেটে কি তবু সমস্ত আশা? মেটে না। তবু থমকালে চলবে না। নতুন আশায় বুক বাঁধতে হবে।
করোনার প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হবে.... এই আশায় বুক বেঁধে আছে আপামর দেশ।
এগিয়ে চলুক বিজ্ঞান.... নিরন্তর সাধনা সার্থক হোক বৈজ্ঞানিকদের.... মা' নিয়ে আসুক শান্তির বাণী।
ঢাকে কাঠি পড়ুক। মন নেচে উঠুক আনন্দে.... ভরে উঠুক আকাশ বাতাস মন্ত্রে...
' যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্হিতা.... নমস্তস্যৈ, নমস্তস্যৈ, নমস্তস্যৈ.... নমো নমহঃ '