সম্পাদকের মননে
* পরিযায়ী_মন *বছরটা যখন শুরু হয়েছিল তখন আমরা কেউই ভাবিনি যে আমাদের জীবনে 'কোভিড ১৯', 'লকডাউন' বা 'আমফান' নামের বিপর্যয়গুলো একসাথে নেমে আসবে। যেমনভাবে ওই মানুষগুলোও ভাবে নি যে অর্থউপার্জনের জন্য স্বভূমির বাইরে গেলে জীবনের চরম বিপর্যয়ের সময় কেউ তার পাশে তো থাকবেই না বরং তার নামকরণটাও পাল্টে যাবে! দিনের পর দিন না খেয়ে, পায়ে হেঁটে পথে ক্লান্ত হয়ে অনেকে প্রাণও দিয়েছে। একদিন টেলিভিশনের পর্দায় ছবি ভেসে উঠল কাতারে কাতারে ঘরের দিকে ফিরতে থাকা 'পরিযায়ী শ্রমিক' দের।
চমকে উঠলাম নাম দেখে। সব মানুষই তো শ্রমিক! শ্রমের বিনিময়ে যে অর্থ উপার্জন করে, সেই-ই শ্রমিক। তা ঘরেই হোক্ বা ঘরের বাইরে। নিজের ঘরে মানুষ ভালবেসে শ্রম দেয়, কোন অর্থের খাতিরে নয়। যদিও সেই শ্রমে কখনও মান থাকে, কখনও থাকে না। সেই অসম্মানটা ধাক্কা খায় চার দেওয়ালের মধ্যেই।
কিন্তু এ অসম্মান! সারা বিশ্বের কাছে যে মাথা নুয়ে গেল আজ আমার মত অনেক বিবেকসম্পন্ন মানুষেরই।
'পরিযায়ী' তো হয় মানুষ ছাড়া অন্যপ্রাণীকুল। যাদের বছরের বিশেষ সময়ে চলে যেতে হয় দেশান্তরে যখন ঋতুবদলের সময় খাদ্য, আবহাওয়া ও পরিবেশ তাদের প্রতিকূল হয়ে যায়। সবচাইতে বড় উদাহরণ হল পাখি। কোচবিহারে থাকার সময় দেখতাম বিশেষ করে শীতকালে হাজার হাজার পাখি কবে যেন জড়ো হত এসে *সাগর_দীঘির* পাড়ে।
আবার ঋতুবদলের সময় এলেই তারা তাদের ঘরের দিকে রওনা দিত। সে এক মনোরম দৃশ্য। নীল আকাশপথে সারিবদ্ধভাবে ফিরে চলেছে 'পরিযায়ী পাখী'র দল।
কিন্তু এই অনাবাসী রাজ্যবাসীদের 'পরিযায়ী শ্রমিক' নামে আখ্যাত করার পেছনে কোন্ মানসিকতা কাজ করল তার কারণ বা সেই মস্তিষ্কজীবীকে খুঁজে বেড়াবার দায়বদ্ধতা আমাদের নেই। তা বলে, আমরা তাদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শনও কি দেখাতে পারি না!
কবি বলেছেন..." যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে"
এ শুধু গান নয়! এ এক মানুষের প্রতি আরেক মানুষের মনুষ্যত্ব প্রদর্শনের আহ্বান।
আমরা আমাদের সীমিত ক্ষমতা দিয়েই এদের পাশে দাঁড়াবার অঙ্গীকার নিই। হোক্ না সামান্য! যে যার মত করেই আশেপাশের চেনাজানা এমন মানুষদের পাশে দাঁড়াই। তবেই না দিনান্তে নিজেও আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারব!