Logo
logo

সাহিত্য / কবিতা

তমসাচ্ছন্ন স্বাধীনতা

"স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় গো-
কে বাঁচিতে চায়"


অনেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অনেক বীর সন্তানের বলিদানের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট আমরা পাকাপাকি ভাবে স্বাধীনতা লাভ করি। ইংরেজ সরকারের হাত থেকে মাতৃভূমিকে শৃঙ্খলা মুক্ত করতে, যে কঠিন লড়াই করতে হয়েছিল তা ভাবলে আজও আমরা শিউরে উঠি। সেই সমস্ত শহীদ বীর যোদ্ধাদের স্মরণ করে আজ যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমি কিছু লিখছি।

আজ আমাদের সামনে একটা বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আমরা কি এত কিছুর পরেও স্বাধীন? স্বাধীনতা যেমন দেশের, তেমনি স্বাধীনতা আমার নিজেরও। আজ সমাজের এই অবক্ষয়ের মধ্যে ব্যক্তি স্বাধীনতা কতটা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে তা চিন্তার বিষয়। We are not afraid today. এই কথাটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে পারলে, তবেই তাকে স্বাধীন বলা যায়। কারণ রাজশাসন দেশ থেকে বিদায় নিলেও রাজনৈতিক নেতাদের রক্তচক্ষু সর্বত্র বিরাজমান, তা কর্মক্ষেত্র হোক বা শিক্ষাক্ষেত্র। স্বাধীনতার নামে যে স্বেচ্ছাচারী বিষবৃক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে, তা আজ আমরা জীবন দিয়ে বুঝতে পারছি। আমাদের মন থেকে এই ভয় যতদিন না দূর হবে, ততদিন আমরা স্বাধীনতার মর্ম ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারব না। সমাজে আজ নারীরা নিজ যোগ্যতায় পুরুষদের সাথে কর্মক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু কোথাও তারা পুরুষ শক্তির কাছে অসহায়। আজও সমাজের মহিলাদের কিছু নোংরা পুরুষদের লালসার শিকার হতে হচ্ছে। শিশুরাও আজ নিরাপদ নয়।
আজও পণের বলি হতে হয় অনেক পরিবারে বধুকে। ট্রেনে বাসে আজও নিগৃহিত হতে হয় মহিলাদের। তাই আমার মনে হয় মহিলাদের স্বাধীনতা কতটা সম্পূর্ণটা পায়, তা বিচার্য।

বাক স্বাধীনতা বা পোশাকে স্বাধীনতা হয়তো আজ পাচ্ছে মহিলারা, তবে ভয় মুক্ত সমাজে চলাফেরার মতো স্বাধীনতা আজও পায় না নারীরা। যে দেশে পিতা তার ঔরসজাত সন্তানকে ভোগ করে নিজের আট বছরের শিশু পুত্রের নামে দোষ চাপিয়ে দেয়, সেই দেশ যে কোথায় নেমেছে তা ভাবলে সত্যিকারের লজ্জা করে। ভদ্রবেশি মুখোশের আড়ালে নরখাদকের দল তাদের তীক্ষ্ণ নখ আর দাঁতে ছিন্ন করে সমাজের নারীদের। তাদের লালসার শিকার মনে করে। এই সমস্ত শয়তানদের জন্য আজ R G Kar থেকে কামুদিনী সর্বত্র নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হচ্ছে উন্নত প্রতিভাকে। সমাজে শুধু নারীরা নয়, আজ নাবালকদের মুক্তি নেই এই কামাতুর হিংস্র মনুষ্যরূপে পশুদের কবল থেকে। কত রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি, সেই সমস্ত মহান শহীদদের স্মরণ করে আমি স্বীকার করছি উচ্চকণ্ঠে, আমি স্বাধীন, আমরা স্বাধীন আজ নারীরা আর পর্দানশীন নয়, তারা বাস-ট্যাক্সি-ট্রেন-প্লেন চালাচ্ছে মাথা উঁচু করে। নভঃকাশে ও তাদের সমান বিচরণ। দোকান বাজার অফিস স্কুলে কলেজে সব জায়গায় আমরা নিজেদের যোগ্যতায় পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছি। মহিলারা আজ প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করছে নিজ যোগ্যতায়। দিদি নাম্বার ওয়ান এর মতো প্ল্যাটফর্মে মহিলাদের সংগ্রামের গল্প আজ ঘরে ঘরে। আর সবশেষে বলি আমরা স্বাধীন বলেই শ্রীমতির দরবারের মতো মহিলা দ্বারা পরিচালিত দরবারে মুক্তকণ্ঠে এবং নির্দ্বিধায় মনের সব কথা লেখার মধ্যে দিয়ে ব্যক্ত করতে পারছি।
মা ঠাকুমাদের কাছে গল্প শুনেছি পরাধীন ভারতের কি নির্মম ছিল সে সব দিন। পুরুষ শাসিত সমাজে মহিলারা পরিবারের দাসী। সেই জায়গা থেকে আজ আমরা নিজস্ব মত প্রকাশ করার মতো জায়গায় পৌঁছেছি। মহিলারা আজ আর মুখ বুঝে সহ্য করে না প্রতিবাদ করে, প্রতিরোধ করে। নিজেকে নিয়ে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করে। তাইতো এত বিবাহ বিচ্ছেদ হয়, একমাত্র পরিবার আর ভয় মুক্ত পরিবেশই পারে স্বাধীনতার নামে স্বৈরাচারী মানুষদের থেকে সমাজকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতার আনন্দ দিতে। তাই আমাদের পরিবার থেকেই শুরু হোক স্বাধীনতার এই লড়াই। শুধু মোমবাতি আর মশালের মৌন মিছিল নয়, আগুনের একটা ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠুক স্বাধীনতার ধ্বজা হয়ে অস্তমিত আকাশের বুকে।

আমাদের যেন বলতে না হয় "এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার"।।

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com