Logo
logo

গল্প / কাহিনী

ঘনঘোর বরষা

তিথি জানলার ধারে বসে বৃষ্টি দেখছিল আনমনে। পাশে বসে খুড়তুতো ভাই টুপাই এক মনে কাগজ দিয়ে নৌকা বানিয়ে চলেছে। একেকটা একেক রকম ডিজাইন। তবে তিথি নিশ্চিত ওগুলো বেশিক্ষণ বৃষ্টিতে চলবে না, একটু বাদেই ডুবে যাবে। কিন্তু কিছু তো একটা করতে হবে। খানিক আগে ভাই-বোন মিলে গোটা কতক নৌকা জলে ভাসিয়ে এসেছে। টিনের চালে অনবরত বৃষ্টি পরার শব্দে মন যেন কেমন করে! সামনে বই খোলা কিন্তু পড়াতে এতটুকু মন নেই। অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে বাইরেটা ঝাপসা। শুধু গাছপালা গুলি হেলে দুলে কসরত দেখিয়ে যাচ্ছে। আজ যে ওরা পড়াশোনা করছে না, কেউ বকছেও না। স্কুলে যেতে পারেনি আর আগামী বেশ কয়েকদিন স্কুল হবেও না। তিথির বাবা এসে মাকে জানিয়েছে যে ওদের বাড়ির পিছনের দিকে যে ছোট্ট নদীটা, যেখানে সারা বছর জল থাকেই না একটা শুকনো নালার মতো দেখায়, প্রচন্ড বৃষ্টিতে সেটি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। জল ঢুকে পরেছে নীচু জমিগুলিতে। নীচু জমিতে বসবাসকারী লোকেরা তিথিদের স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছে। যতদিন না জল নামছে স্কুল ছুটি ।

দুপুরে কাম্মা সকলকে খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা খাওয়ালো। তিথির কাকাই স্কুল শিক্ষক। কাকাইয়ের স্কুলের সুবিধার জন্য দুটি স্টেশন পরে ভাড়াবাড়িতে থাকে। আজ তিথির বাবা ওদের ডেকে পাঠিয়েছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে খুব সদ্ভাব । দুই ভাইয়ের বর্ধিষ্ণু পরিবারকে দাদা ছাতার মতো আগলে রেখেছে। কিন্তু যখনই কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটে, ভাই ছুটে এসে দাদাকে সাহায্য করে।

বাবা কাকা বেরিয়ে গেছিল বিকেল বিকেল। এসে খবর দিল অত্যন্ত নিরাশ হয়ে যে, পুকুরের মাছগুলোকে আর রাখা গেল না। পুকুর উপচে সব মাছ বেরিয়ে গেল! তাতে বেশ ক্ষতি হবে। সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেও কিছু লাভ হয়নি। বৃষ্টির যেন উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।

আকাশ তো কালোই ছিল। সন্ধ্যের অনেক আগেই সন্ধ্যে নেমে এসেছে। এদিকে তিথির মা ব্যস্ত ওদের গাই ধৌলিকে নিয়ে। ধৌলি মা হতে চলেছে। তিথির মা অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে বলেছে সন্ধ্যের আগে যা হবার হলে হয় নইলে খুব মুশকিলে পরতে হবে। এদিকে বৃষ্টির জন্য কারেন্ট নেই। হ্যারিকেন জালানো হয়েছে। উঠোন পেরিয়ে গোয়ালঘরটি একটু নিচুতে। ওখানে জল জমতে শুরু করেছে। তিথি ও টুকাই লুডু খেলছে। যদিও তিথির মন গোয়ালে পরে রয়েছে। অবশেষে কাম্মা এসে খবর দিল ধৌলি একটি ছোট্ট ফুটফুটে বাছুরের মা হয়েছে।

পুরোপুরি সন্ধ্যে। বাবা-কাকাই ডাইনিং টেবিলে বসে গল্প করছে। মা-কাম্মা, রান্নাঘরে ব্যস্ত। ধৌলি ওর মেয়েকে নিয়ে গোয়াল ছেড়ে বারান্দায় ঠাঁই পেয়েছে। মায়ের পরম যত্নে পেতে দেওয়া খড়ের বিছানায় শুয়ে চর্বণ করছে। তিথি ও টুপাইয়ের ডাক পরতেই ওরা ডাইনিং টেবিলে এসে দেখল মুড়ি ও তেলেভাজা। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে বাবা কাকাইয়ের কথোপকথন থেকে তিথি বুঝতে পারল মাছ বেরিয়ে যাওয়াতে যেমন ক্ষতি হয়েছে, এবার নীচু জমিতে খুব ভালো ফসল হবে। এই বর্ষা যেমন দুঃখ দিয়েছে তেমনি আনন্দ বহন করে এনেছে। তেলেভাজায় কামড় দিয়ে তিথি শুনতে পেল ধৌলির ফোঁস ফোঁস নাকের শব্দ। সারাদিনের ধকলের পর হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে।

<<Prev1234Next>>

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com