Logo
logo

গল্প / কাহিনী

ছোট গল্প : মাতৃরূপেন সংস্থিতা

রাইমা এবছর অনেক কিছু প্ল্যান করেছে পুজোর জন্য।প্রিপুজো প্ল্যান আর কি।ওর তিন নম্বর বয়ফ্রেন্ড রোমিতকে বলেই রেখেছে,পুজোর কটা দিন যেন রোমিত কোন প্রোগ্ৰাম না রাখে।সারাক্ষণ যেন রাইমার পেছনে ছায়ার মতো লেগে থাকে।রোমিত বেচারা আর কি করে,বাধ্য ছেলের মতো ঘাড় নাড়িয়েছে।যা খামখেয়ালি স্বভাব রাইমার!
একটু উড়নচন্ডী টাইপস হলেও রাইমার মনটা কিন্তু খুব ভালো।খুব ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ায় একমাত্র কন্যা হওয়ার সুবাদে বাবা আর ভালোপিসির আদরে আব্দারে বেড়ে উঠেছে রাইমা।একদিকে যেমন রাইমার ঘন ঘন মুড সুইংএ জেরবার বাড়ির লোকজন,অন্যদিকে আবার বন্ধুমহলে ততোটাই পপুলার দিলখোলা রাইমা।তবে একবার রেগে গেলে কিন্ত কারোর রক্ষা নেই।পুরো মা চন্ডী।অন্যায় একদম সহ্য করতে পারে না রাইমা।
আজকালকার দিনে পুজো শুরু হয়ে যায় মহালয়া থেকেই।রাইমার আবার পুজোর প্রত্যেকদিন নতুন ড্রেস,সঙ্গে ম্যাচিং জুয়েলারি পরে বিভিন্ন ভঙ্গিতে সেল্ফি তোলা চাই।এছাড়াও আছে নানারকম পোজে ফটোশেসন।তা সেসব বয়ফ্রেন্ড ছাড়া কে করে দেবে!এছাড়াও আছে হাজার বায়নাক্কা।ফুচকা খাওয়াও,আইসক্রিম খাওয়াও,কোল্ড ড্রিংক্স খাওয়াও,এটসেটরা এটসেটরা।এইসব স্বভাবের জন্যেই তো রাইমার আগের দু দুটো বয়ফ্রেন্ড ভাগলবা।এইসব অত্যাচারে রোমিত ও কদিন টিকবে সন্দেহ!তবে রাইমা এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না।ওর উইশ ফুলফিল হলেই হলো।সেটা রোমিত করুক,বা অন্য কেউ,দ্যাদটস নান অফ হার বিজনেস।
পুজোর শপিং এর জন্য বাপি পুরো ফাইভ থাউজ্যান্ড দিয়েছে রাইমাকে।উপরি পাওনা ভালোপিসির টু থাউজ্যান্ড।পুরো সাত হাজার।জমিয়ে শপিং করবে রাইমা,মনস্থির করে রিং করে রোমিতকে।বাজে সকাল নটা।তক্ষুনি আসতে হবে,নাহলেই রনরঙ্গিনী রূপ ধরবে রাইমা।সবে জলখাবার খেতে বসেছিল রোমিত বেচারা।খাওয়া মাঝপথে ফেলে পরিমরি ছুটল ম্যাডামের মেজাজ ঠান্ডা করতে।
হাইওয়ে দিয়ে রোমিতের বাইক ছুটছে,পেছনে দুহাত ছড়িয়ে ফুরফুরে হাওয়া উপভোগ করছে রাইমা।আজ প্রচুর প্ল্যান।হঠাৎ মাঝরাস্তায় জ্যাম।প্রচুর লম্বা।বিরক্ত হয়ে বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে রোমিত।
সামনে একটা বড়ো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।একটা ফ্যামিলি,মা বাবা বাচ্চা।মা বাবা স্পট ডেড।শিশুটা অচেতন।এই দৃশ্য দেখে চোখে জল এসে যায় রাইমার।রোমিতের শার্ট খামচে ধরে রাইমা,মনে পড়ে যায় নিজের শৈশবের কথা।রোমিত পুলিশের সাহায্যে বাচ্চাটাকে তাড়াতাড়ি এ্যাম্বুলেন্সে তুলে রওনা হয় হাসপাতালের দিকে,সঙ্গে রাইমা।পুলিশের তৎপরতায় দুটো বডি সরিয়ে জায়গাটা পরিস্কার করা হয় একটু পরেই।
অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অধৈর্য ভাবে পায়চারি রত রোমিত ঘনঘন দেখতে থাকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা রাইমাকে।প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে।রক্ত দিতে হয়েছে।ব্লাড গ্ৰুপ ম্যাচ করায় রক্ত দিয়েছে রাইমা।সঙ্গে ওর পুজোর শপিং এর পুরো টাকাটাও।ডাক্তারের হাত ধরে বারবার বাচ্চাটাকে ভালো করে দেওয়ার অনুরোধও করেছে রাইমা।একসময় লাল আলোটা নিভে যায়।সেদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে রাইমা।বুকটা ধুকপুক করছে খুব জোরে।
আজ পঞ্চমী।এর মাঝে কেটে গেছে চার চারটে দিন।বাচ্চাটার অবস্হা একটু স্টেবল।এর মাঝেই এক ভয়ঙ্কর কঠিন ডিশিসন নিয়ে ফেলেছে রাইমা।ও এ্যাডাপ্ট করতে চায় বাচ্চাটাকে।অবিবাহিত রাইমার এ কি সিদ্ধান্ত!কিন্ত রাইমা অনড়।নিজে মাতৃহারা হয়ে ও কিছুতেই আর একটা শিশুকে মাতৃহারা হতে দেবে না।মায়ের স্নেহ দিয়ে বড়ো করবে বাচ্চাটাকে।ওর পাশে যদি কেউ নাও থাকে,তবুও!প্রথমে সবাই আপত্তি জানিয়েছিল,পরে রাইমার জেদের কাছে হার মেনে রাজি হয় এই প্রস্তাবে।এই কটা দিন ঘর আর হাসপাতাল করেই কেটে গেছে রাইমার।অনেক আইনি বাধা পেরিয়ে ও আজ সফল।রোমিত সারাক্ষণ আগলে রেখেছে রাইমাকে।এই মেয়েটাকে সত্যিই ও বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে।
সপ্তমীর সকালে একটা নরম তোয়ালে দিয়ে বুকে জড়িয়ে বাচ্চাটাকে ঘরে নিয়ে আসে রাইমা,সঙ্গে রোমিত।বরনডালা নিয়ে রেডি ছিল ভালোপিসি।ওকে বরন করে ঘরে তুলতে হবে না!ঘরে মা লক্ষী এসেছে!রাইমার মাথায় প্রদীপের তাপ দিতে দিতে বিরবির করেন ভালো পিসি,"তুই হারতে পারিস না মা,তুই তো আমার মা অন্নপূর্ণা!"
ঢাকের ঢ্যাংকুড়াকুড় শোনা যাচ্ছে,বাতাস ভারী ধূপের গন্ধে,উলুধ্বনির আওয়াজে।বাতাসে গুরুগম্ভীর আওয়াজে ভেসে আসছে মাতৃমূর্তীর মন্ত্রচ্চারন।

<<Prev1234Next>>

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com