অদৃশ্য শৃঙ্খল
কত সংগ্রাম করে কত শত তাজা প্রাণের তাজা রক্তের বিনিময় ভারত মাতাকে ইংরেজদের থেকে শৃঙ্খলমুক্ত করা হয়েছিল।১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয়েছিল আমাদের মাতৃভুমি ভারতবর্ষ। কিন্তু আমরা কি সত্যিই স্বাধীন হতে পেরেছি আজও? নাহ্ আজকের ভারত বর্ষ তৈরী হয়েছে এক ভয়াবহ নরকে।এখানে না আছে কোন শৃঙ্খলা না আছে কারোর নিরাপত্তা। আমরা সব সময়ে ভয়ে ভয়ে দিন কাটাই।শান্তি নেই কারোর মনে।
কত শত ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিদিন....তার দুচারটে অশ্রুজল তুলে ধরলাম।
ঘটনা ১ঃ
ছোট্ট সাড়ে তিন বছরের মেয়ে যখন পাশের ফ্ল্যাটে তার সঙ্গীর সাথে খেলা করতে যায় সেখানে সঙ্গীর বাবা সুযোগ বুঝে তাকে বলয়াৎকার করে তার প্রাণ নাশ করে।
ঘটনা ২ঃ
এক নামকরা বিখ্যাত ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের পিটির টিচার যোগব্যায়াম শেখানোর নামে ছাত্রীদের গোপন অঙ্গে হাত দেয় বারবার।
ঘটনা ৩ঃ
ছেলেদের স্কুলে একটি বাচ্ছা ছেলেকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে তার পায়ু দিয়ে দিনের পর দিন একজন বয়স্ক শিক্ষক তার পেনিসটি জোড় করে প্রবেশ করায়।শুধু তাই নয় তাকে ভয় দেখায় কাউকে বললে তাকে ফেল করিয়ে দেবে পরীক্ষাতে।বাচ্ছা ছেলেটি এক সময় অসুস্থ হয়ে পরে।তারপরে সব জানাজানি হয়।
ঘটনা ৪ঃ
নামকরা ইউনিভার্সিটিতে/ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ুয়ারা হচ্ছে রাগিং এর স্বীকার।প্রতিনিয়ত রাগিং এর চাপে তারা চলে যাচ্ছে ডিপ্রেশনে। কখনও তারা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।কখনও তাদের অত্যাচার করে খুন পর্যন্ত করা হচ্ছে।সব ঘটনা আমরা জানতে পারি না।কিছু ঘটনা দৈবাৎ খবরের পাতায় আসে।তাও পরের দিকে তা ধামাচাপা পরে যায়।বিচার পায়না সেই নির্যাতিত পড়ুয়া।তার বড় উদাহরণ স্বপ্ননীল।
ঘটনা ৫ঃ
কয়েকবছর আগে একজন ৭২ বছর বয়সী সন্ন্যাসীনি রাতের বেলা তার আশ্রমের মধ্যেই দুষ্কৃতিদের হাতে রেপ হয়েছিলেন।
ঘটনা ৬ঃ
হাল আমলের ঘটনা, বিশিষ্ট সরকারী মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটালের ভিতরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ নিজেদের স্বার্থে নাইট ডিউটিতে থাকা একজন মহিলা ডাক্তার কে নৃঃশংস ভাবে খুন ও রেপ করলো।শোনা যাচ্ছে তার আগে বেশ কিছু মাস ধরে নানা ভাবে তাকে মানষিক যন্ত্রনাতে বিদ্ধ করছিল।এখনও তার বিচার হয়নি..... চলছে...
রাত দিন আমাদের সমাজে কন্যা ভ্রুন হত্যা করা হচ্ছে।আইন করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না।উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, বিহার এর অলি গলিতে রেপ করে গুম করে দেয় বডি।আর কন্যা জন্মালে তাকে দুধের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে মেরে ফেলা হয়।
এছাড়া আছে, ভীড় ট্রেন,বা বাসে বা ফাঁকা রাস্তাতে, মেলার ভীড়ে ইভটিজিং প্রতিনিয়ত।
সুতরাং,সন্তানদের স্কুল কলেজ বা কোচিং সেন্টারে পড়তে পাঠিয়ে বা হস্টেলে রেখে কোন পিতা মাতা শান্তি পাচ্ছেন না।এমন কি চাকরী স্থলেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের চাপে ( কথা না শুনলেই চাকরী কেড়ে নেবার ভয়) দিন দিন মানুষ ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে।এছাড়া আছে নানান রাজনৈতিক মহলের চাপ। বাড়ির মেয়েদের, নানান ভয়ে ছোট থেকেই সন্ধ্যের পরে রাস্তাতে বেড়োতে দিই না,হাজার কাজ থাকলেও। এমনকি দিনের বেলাতেও তাড়া বাড়ির বাইরে বেড়োলে বাবা মায়ের মনে শান্তি থাকেনা যতক্ষন না বাড়ি ফেরে।
এমনকি যে ঘটনা গুলোও সামনে আসে সেগুলোতেও সঠিক বিচার হয় না।সাজানো হয় খুনি বা সাজানো হয় রেপিস্ট।প্রকৃত দুষ্কৃতি ঢাকা পরে পার পেয়ে যায়।আর ফাঁসি বা শাস্তি হয় অন্য কারোর।যেমন -- হেঁতাল পারেখের রেপ আর খুনে সাজা পেল ধনঞ্জয়।যে সত্যিই কিছু করেনি।
এছাড়া প্রতিনিয়ত চলেছে চাহিদা মত পণ না পেলে কিংবা পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে না পারলে শ্বশুরবাড়িতে বধু নির্যাতন বা বধু হত্যা হয়।আর যে মেয়ে প্রতিবাদ করতে জানে বা পারে তার সংসার ভাঙে ডিভোর্সে।বিয়ে দিয়েও শান্তি নেই।আবার সব সময় মেয়েরাই যে নির্যাতিতা সব সময় হচ্ছে তা নয়,বহু পুরুষও নিজের শারীরিক বা মানষিক বা আর্থিক দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হয় কোন মেয়ের হাতে।তার পরেই ক্রমশ চলে যায় ডিপ্রেশনে।বেছে নেয় আত্মহননের পথ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে।
শুধু কি জামা কাপড় খুলেই আঁচড়ে কামড়ে রেপ করছে পুরুষ নারীকে? একদমই না নোংরা দৃষ্টি দিয়েও রেপ করছে রাস্তা ঘাটে। মায়ের যে স্তন পান করে একটি শিশু জন্মের পরে প্রথম খিদে নিবারণ করে, সেই স্তন কেই বড় হয়ে সে দেখে ললুপ দৃষ্টি দিয়ে। তখন তার কাছে সেটা যৌনাঙ্গ। পথে ঘাটে কোন মেয়ে তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় খোলামেলা পোষাক পরলে কিংবা তার শাড়ির আঁচল সরে গেলে বা কোমড়ের জামা বা কাপড় সরে গেলে তা পুরুষ দেখে লালসার সাথে।আর সেই জায়গাটা কোনভাবে যদি ছুঁয়ে দিতে পারে তো পুরুষ নিজেকে রাজা মনে করে।
কোন কোন মেয়ে বিয়ের পরে বলে আমার শ্বশুরবাড়ি বেশ ভালো।কারণ তারা আমার বেশ ভূসা চাকরী কিংবা পড়াশুনোতে বাধা দেয়না।কোন কোন পুরুষ গর্ব করে বলে আমার স্ত্রীকে আমি যথেষ্ঠ স্বাধীনতা দিয়েছি।কোন কোন শাশুড়ি বলেন আমার বৌমাকে আমি কোন কাজই সংসারের করতে দিইনা।উল্টে সকালে উঠে তার অফিসের লাঞ্চটা আমিই বানিয়ে ওর ব্যাগে ভরে দিই।কতটা হাস্যকর এই কথাগুলো একবার একটু ভেবে দেখুন।
আমাদের দেশের মেয়েরা আসলে জানেই না কোনটা স্বাধীনতা আর কোনটা তার নিজের অধিকার।তাই এসব ভাবে।বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু।
আমরা কি সত্যিই ভালো আছি? এ কেমন স্বাধীনতা? যেখানে ভালো করে শান্তিতে অক্সিজেন নেওয়া যায় না।শান্তিতে এক গ্রাস ভাত মুখে তোলা যায় না?
আমরা সেই দিনেই সত্যি কারের স্বাধীন হব,যেদিন আমাদের দেশে আর কোন এই উপরোক্ত ঘটনাগুলো ঘটবে না।আমরা নিজের ইচ্ছাতে নিজের স্বাধীনতাতে সত্যি কারের মাথা উঁচু করে সবাই শান্তিতে বাঁচতে পারবো।কোন কম্প্রোমাইজ বা ভয় নিয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে বাঁচতে হবে না।সেই দিনই আমরা পাবো প্রকৃত স্বাধীনতা সেই দিনই হবে আমাদের এই অদৃশ্য শৃঙ্খল মুক্ত জীবন।