Logo
logo

সাহিত্য / কবিতা

বাংলা নববর্ষের ইতিকথা

" এসো হে বৈশাখ এসো এসো
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক ---- এসো এসো"

মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই মার্চ বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয় তাঁর সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে ৫ই নভেম্বর ১৫৫৬ । কৃষকদের খাজনাপাতি দেওয়ার সুবিধার্থে এই সনের প্রবর্তন করা হয়। এ কারণে এই সনের আরেক নাম 'ফসলি সন'। প্রথমে এটিই প্রচলিত ছিল, পরে এর পরিচিতি দাঁড়ায় বঙ্গাব্দ নামে, যা আজও কার্যকর রয়েছে।বৈশাখের এই উৎসবকে সার্বজনীন উৎসব বলা হয়, তার কারণ এই উৎসবে সকল ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করে। বাঙালি জীবনের মৌলচেতনা হল অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করা। সেই চেতনা এখানে হাজার বছর ধরে প্রবহমান।
বঙ্গাব্দ সনের শুরু হয় প্রধানত কৃষকের সুবিধার্থে। কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সকলেই নিজেদের জীবনের আর্থিক রোজনামচাকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেন এই সনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যুক্ত হয় বণিকের স্বার্থ, বিশেষ করে খুচরো ও মধ্য পর্যায়ের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হিসাবের খাতা সংরক্ষণ ও কার্যকর রাখা হতো এই সনের দিন তারিখ ও মাসের সঙ্গে মিলিয়ে। কারণ এভাবে হিসাব রাখার ফলে তাদের বছরের শেষে গিয়ে পুরো বছরের ব্যবসার দেনা পাওনার গতিপ্রকৃতির কী রূপ তা বুঝতে যেমন সুবিধা হতো, তেমনি বছর শেষে গিয়ে একটা বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে নতুন বছরের হিসাবের খাতা খুলতে সুবিধা হতো।
হালখাতাকে ঘিরে এই যে আয়োজন ও উৎসব এটা প্রধানত ব্যক্তিকেন্দ্রিক হলেও এখানে সীমিত পরিসরে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে এবং বাস্তবিকই সেই ধরণের উপস্থিতি ঘটেও থাকে।
এখনও পহেলা বৈশাখের দিন ধানের বীজ ছড়িয়ে কৃষকের বাড়ি আগমন ঘটে বরণের ডালি সাজিয়ে। উঠানে আগে থেকে রেখে দেওয়া হয় জল। তাতে দেওয়া হয় কচি আম পাতা, দূর্বা ঘাস সহ আরও অনেক কিছু। সেই সকল কিছু দিয়ে উঠান লেপানো হয়। বাড়িতে আলাদা করে রান্নার আয়োজন থাকে।
ধনী গরীব মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত সকলেই এই উৎসবে সামিল হন, আনন্দকে ভাগ করে নেওয়ার লক্ষ্যে। নতুন বছরের এই দিনটির জন্য নতুন পোশাক পরে বাঙালিরা নতুন বছরকে আনন্দের সাথে আহ্বান জানায়।পহেলা বৈশাখের উৎসবের সঙ্গে সকলেরই যোগ হওয়ার সুযোগ ঘটে। কারণ এই উৎসবের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তৈরি হয়েছে। যখনই কোন উৎসবের সঙ্গে অর্থনীতির নানা প্রান্তের যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয় তখনই সেই উৎসব সার্বজনীন হয়ে ওঠে, পহেলা বৈশাখের উৎসবের ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটেছে। এই উৎসবে কেউ ক্রেতা হয়ে আনন্দ উপভোগ করেন আবার কেউ বিক্রেতা হয়ে আনন্দ উদযাপনের অংশ হন।
বাংলার ঘরে ঘরে এই উৎসব যেন প্রাণের বাণ ডেকে আনে। বাঙ্গালি জীবনে বিবিধ সমস্যায় আকীর্ণ। এখানে আনন্দ যেমন আছে তেমন দুঃখ আছে। এর প্রকৃতিই এমন, কখনও বন্ধুর কখনও বা সৌহার্দ্যপূর্ণ। বাঙ্গালি এর মধ্যে দিয়েই রপ্ত করেছে বাঁচতে শেখার মন্ত্র। এবং সেই মন্ত্রকে কীভাবে নিজের জীবনের চালিকাশক্তিতে রূপান্তর করেছেন, তার অনুপম দৃষ্টান্ত হলো পহেলা বৈশাখের উৎসব।
একটা উৎসব কীভাবে সার্বজনীন হয়ে ওঠে, কীভাবে তার প্রসার ও পসার ঘটতে পারে, তার নজির রয়েছে বাঙ্গালির পহেলা বৈশাখের উৎসবে। পৃথিবীতে এরকম একটা উৎসবের এরকম ব্যাপকতা বিস্তার, গ্রহণযোগ্যতা ও মান্যতা বোধ হয় দ্বিতীয়টি নেই।

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com