প্রকৃতি প্রিয় রবীন্দ্রনাথ
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বাঙালির আবেগ।যেখানেই হাত ছোঁয়াই,খুঁজে পাই রবীন্দ্রনাথ।শৈশব থেকে কৈশোর,কৈশোর থেকে যৌবন,যৌবন থেকে বার্ধক্য, জীবনের প্রত্যেকটা গতি পরিবর্তনের বাঁকে বাঁকে হাত বাড়ালেই রবীন্দ্রনাথ।
প্রেমপূজারী রবীন্দ্রনাথের ছিল প্রকৃতির ওপর অমোঘ টান।মুক্ত খোলা আকাশ হাতছানি দিয়ে ডাকত তাকে,যা কিনা কবিগুরুর কাছে স্বাধীনতার প্রতীক।তাইতো শহরের কোলাহল ছেড়ে শেষ জীবনটা বেছে নিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের শান্তির ঘেরাটোপে,শীতল গাছের ছায়ায়।নিজে কোনোদিন ধরা বাধা গতে পড়াশোনা করেননি,ছাত্রদেরকেও শিক্ষা দিতেন ছাতিম গাছের তলায়,বটের ঝুড়ির প্রাঙ্গণে।বারবার নিজেও উপলব্ধি করেছেন,অন্যদেরকেও বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি।প্রকৃতি বরাবরই কবিগুরুকে অনুপ্রেরণা দিত আরো বেশি করে কবিতা লিখতে,গান রচনা করতে।বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা হিসেবে উনি দেখতেন প্রকৃতিকে।ওনার সবধরনের লেখা,বিশেষ করে কবিতায় আমরা বারংবার পাই প্রাকৃতিক বর্ণনা।মাথার ওপর কখনো সাদা মেঘের ভেলা ভাসা ঝকঝকে নীল আকাশ,কখনো মেঘে ঢাকা গুরুগম্ভীর আকাশ,কখনো ঝিরঝির বৃষ্টি,কখনো মুষলধারায় বর্ষনমুখর আকাশ,মাঝে বিদ্যুতের ঝিলিক,কাদামাটির সোঁদা গন্ধ,কখন সবুজ ঘাস জমি,কখনও বা রঙিন ফুলের বাহার,প্রকৃতির নানা ঋতুতে রূপ পরিবর্তনের সাথে তালে তাল মিলিয়ে কবিগুরু আমাদের উপহার দিয়েছেন নানান স্বাদের কবিতা।এককথায় প্রকৃতি কবিগুরুর কাছে লেখার রসদ,প্রেমের বাসস্থান।
সবশেষে একটা কথাই বলব,কবিগুরুর জীবনে প্রকৃতির ভূমিকা ছিল অপরিসীম।কবিগুরু জীবনে অনেক ওঠাপড়া,নিকট আত্মীয় বিয়োগের আঘাত সহ্য করতে,মনকে শান্ত করতে বারবার প্রকৃতির মাঝে ফিরে আসতেন।গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে বিদেশে ভ্রমণ করবার পরেও ভালো লাগেনি বিদেশের মাটি।তাইতো দেশের মাটিতে,প্রকৃতির মাঝে,শান্তিনিকেতনে থেকে রচনা করেছিলেন বিশ্বভারতী,যা এখনকার দিনে পর্যটকদের জন্যে এক বিখ্যাত স্থান,মন্দির সমান।