আমার প্রাণ পুরুষ রবীন্দ্রনাথ
ঘরে ঘরে ফ্রেমের ভিতর যার ছবি দেখে আমার শৈশবের দিনগুলো কেটেছে তিনিই আমার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যার চোখ দিয়ে এই প্রকৃতিকে চিনেছি তাঁর রূপ, রস, গন্ধ অনুভব করতে শিখেছি তিনি আমার চোখে প্রকৃতি প্রেমিক কবি গুরু। ঘটনা চক্রে একবার সুযোগ হয়েছিল শান্তি নিকেতনে গিয়ে থাকার,তখন বয়স কম,তাই অন্তরের আবেগের প্রকাশ আরও বেশি। আত্মীয় সেই দিদির সাথে বেরিয়ে ছিলাম রবীন্দ্রনাথকে খুঁজতে,এক বৃষ্টির দিনে বনলতায় শরীর ছুঁয়ে কোপাইয়ের দিকে হেঁটে যাওয়া। অথবা কুঁচ ফুলের সুবাস নিয়ে যেতে যেতে ঠাস ঠাস করে ইতি উতি পড়া তাল কুড়িয়ে মজা পাওয়া। আবার কখনও উওরায়নের দিকে যেতে যেতে আম তেঁতুল কুড়িয়ে শ্যামবাটির কেয়াঝোঁপ পেরিয়ে অনেক দূর হেঁটে যাওয়া । হ্যাঁ এই ভাবে প্রকৃতিকে সামনে থেকে পাওয়ার সুখে আনন্দে ভেসেছি।সেখানের প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে কবির কবিতায় মনে মনে উপলব্ধি করেছি আমরা প্রকৃতির ই সন্তান। যেমন ভাবে কবি রবীন্দ্রনাথ আমাদের বোঝাতে চেয়েছিলেন।
তার আগেই তো সহজ পাঠে পড়েছি চুপ করে বসে ঘুম পায়।চল ঘুরে আসি। ফুল তুলে আনি।আজ খুব শীত। কল্পনার চোখে দেখেছি কচুপাতা থেকে টুপটুপ করে হিম ঝড়ে পড়ে।জলে ভেজা ঘাসে পা ভিজে যায়। দেখতাম দুঃখী বুড়ির মতো কোনো ঠাকুমা উনুন ধারে বসে আগুন পোহাতো আর গুনগুন করে গান গাইতো।পাড়ায় তখন এত বড় বড় বাড়ি ছিল না।পথে চলতে চলতে গাছের ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যেত। স্কুল থেকে ফেরার পথে মনে পড়ত তোমার কবিতাটি ছায়ার ঘোমটা মুখে টানি আছে আমাদের পাড়া খানি। সত্যি ছিল পথের ধারে একটি বাঁশ ঝাড়, তার সরু পাতাগুলি ঝিরঝিরে হাওয়ায় নেচে উঠত।আর ছিল রাস্তার পাশে মুদিখানা। সেখানে সত্যি চাল,ডাল,তেল,নুন সব পাওয়া যেত। কবি গুরু তোমার লেখা পড়ে আমার ছোট বেলার টুকরো টুকরো ছবি গুলো জুড়ে যে কোলাজ মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে তার স্রষ্ঠা তো তুমিই।যখন বন জঙ্গল সাফ করে উন্নয়নের কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হচ্ছে পৃথিবী ছুটছে আরো তীব্র গতিতে আধুনিকতা কে সঙ্গে নিয়ে,ঠিক সেই সময় রস কস বিহীন রুক্ষ উষর ভুমিতে যেখানে প্রখর গ্রীষ্মের রুদ্র বাতাস মাটিতে দাপাদাপি করে বেড়ায় এমন এক জায়গায় তুমি আশ্রম সদৃশ্য বিদ্যালয় তৈরি করলে যা দিনে দিনে দেশ-বিদেশের গাছে ফুলে ভরে উঠলো।তারা কেউ কেউ এল বুয়েনোস আইরেসে থেকে, আবার কেউ বা জাভা,বালি, শ্রীলংকা থেকে। আশ্রমের প্রতিটি ঋতু বুঝিয়ে দেবার জন্য হরেক বর্ণ ও গন্ধের ফুল সাক্ষী হয়ে বনানীতে ভরিয়ে তুললো। তোমার আশ্রম তখন কোথায় ছিল। সবুজায়ন বন সংরক্ষণ বা প্রকৃতি বিষয়ক সচেতনতা কিন্তু কবিগুরু তুমি তোমার লেখায় গানে কবিতায় আশ্রমের ছেলেমেয়েদের মনে প্রবেশ করিয়ে দিলে, যে আমরা সবাই প্রকৃতি মায়ের সন্তান তার কোলেই আমাদের বেড়ে ওঠা। আমাদের একমাত্র আশ্রয় বর্ষার শরতের হেমন্তের এত রূপ, এত রহস্য যে আছে তোমার আগে তো কেউ শেখায় নি।
তাই তোমাকে খোঁজার ,তোমাকে বোঝার চেষ্টা চলবে সারা জীবন ধরে ।প্রতি টি বঙ্গবাসীর মনে তুমি বিরাজমান । কাঁকর বিছানো পথে ,শাল বীথি দিয়ে জোব্বা পরিহিত ঋষিতুল্য যে ছায়া শরীর হেঁটে আসে আলোক প্রদীপ শিখা জ্বেলে তাকে কি অত সহজে বোঝা যায় ? আসলে হাতের কাছে পড়ে থাকা সোনা কে আমরা কাঁচের টুকরো ভেবে ভুল করে ফেলি সহজেই । তাই তার দেখানো পথ অনুসরণ করে প্রকৃতি কে আপন করে নিতে পারবো কবে ?এর উত্তর শুধু দিতে পারবে সময় । তাই এখন শুধু প্রতীক্ষার প্রহর গোনা ।