রবির আলোয় বৃক্ষরোপণ
তেজঃসূর্য উজ্জ্বল কীর্তি অম্বরমাঝে
যে কিরণ ছড়িয়ে আছে জগৎ-এ
সৃজনশীলতাকে, সৃষ্টিকে, অপরূপ সুন্দর মহিমাকে,
স্নিগ্ধতাকে সঞ্চারিত করেছো তুমি
বিশ্বের দরবারে।
১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শৈশব থেকেই তার চার দেয়ালের মধ্যে পড়ালেখা করতে ভালো লাগতো না। বাড়িতে সব বিষয়ের শিক্ষক এসে শিশু রবিকে শিক্ষাদান করতেন। শৈশবেই বৃষ্টিস্নাত গাছের পাতাগুলোকে নৃত্যরত অবস্থায় দেখে গণিতের খাতায় লিখে ফেলেন, "জল পড়ে পাতা নড়ে, পাগলা হাতি মাথা নাড়ে"।
আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন স্কুলে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন উপলক্ষ্যে নাচ, গান, আবৃত্তি শেখানো হত। তখন থেকেই আমি রবিঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বীজ বপন করি হৃদয়ে। যত বড় হই তার লেখা বই পড়ি এবং জানতে পারি শান্তিনিকেতনের কথা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকৃতির সাথে নিবিড় ভাবে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ছাত্রছাত্রীদের মুক্ত আকাশের নীচে গাছের তলায় পড়ার ব্যবস্থা করেন। প্রকৃতিকে ভালোবেসে অজস্র গান, গল্প, কবিতা, নাটক রচনা করেন। আমাদের দেশ ঋতু বৈচিত্র্যে গঠিত। প্রত্যেক ঋতু তার নিজ নিজ মহিমায় প্রকাশিত হয়। এই বৈচিত্র্য মানুষের জীবনে বাঁচার রসদ জোগায়। আমাদের সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। প্রকৃতি পাঠের পাঠশালা তিনি নিজে মানুষকে নানাভাবে শিখিয়েছিলেন। শান্তিনিকেতনে মুক্ত শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা লাভের জন্য দেশবিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এসে শিক্ষা লাভ করেন।
তোমার চিন্তার পরিব্যাপ্তি ছিল বিশাল। শৈশবের পাতা থেকে উঠে আসা 'তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে' থেকে 'এসেছে শরৎ হিমের পরশ, লেগেছে হাওয়ার পরে' প্রতিটি ছন্দে প্রকৃতির ছোঁয়া। যৌবনে তোমার গানে প্রাণে জেগেছে প্রেমের ছোঁয়া। কাব্যে, নাটকে, গীতিআলেখ্যে সর্বত্র আছে এক প্রকৃতি প্রেমের চিরন্তন ডাক। আসমানী চাদরের উন্মোচন ঘটিয়ে, বাঁধভাঙা জ্যোছনা ছড়িয়ে পড়া আঙিনায় রঙীন স্বপ্নগুলো প্রাণ পায় তোমার গানে। প্রকৃতির বুকে দুহাত প্রসারিত করে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে- হে কবি, তুমিই তো সেই স্রষ্ঠা, যার কলমে জন্ম নিয়েছে শত সহস্র প্রকৃতির প্রেমলীলা। বর্ণে, গন্ধে, রূপে,ছন্দে, আনন্দে মাতোয়ারা আমার হৃদয়। হে কবি, ধন্য আমি জন্ম নিয়েছি তোমার জন্মভূমে। তোমার বিশ্বাস ছিল রুদ্ধদ্বার দেবালয়ে দেবতা থাকেন না, দেবতার বাস খেটে-খাওয়া মানুষের মধ্যে। প্রকৃতির বুকে জন্ম নেওয়া ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে যে সুন্দর বর্ণনা তুমি রেখে গেছো, আজও আমরা তোমার দেখা দূরদৃষ্টিকে সম্মান করি।
কিছু লোভাতুর মানুষ নিজ স্বার্থে শষ্য-শ্যামলা প্রকৃতি মা কে ধ্বংস করে, ইঁট-কাঠ-কংক্রিটের আকাশচুম্বী অট্টালিকা বানাচ্ছে। নির্বিকারে গাছ কেটে, জলাশয় বুজিয়ে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে চলেছে। প্রাণীকূল আজ অসহায়। বিশ্ব আজ উষ্ণায়নের ভারে জর্জরিত। জানিনা আর কোনও দিন তোমার দেখানো পথে প্রকৃতিকে মায়ের আসনে বসিয়ে শিশুদের বাসযোগ্য করার অঙ্গীকারবদ্ধ হতে পারবো কিনা??
মুক্তি আজিকে নাই কোনো ধারে,
আকাশ সেও যে বাঁধে কারাগারে,
বিষনিশ্বাসে তাই ভরে আসে
নিরুদ্ধ সমীরণ।।