Logo
logo

গল্প / কাহিনী

বিষন্নতার নববর্ষ

মলিন পুরানোকে সরিয়ে নতুনের মধ্যে দিয়েই নতুন বছরের সূচনা ঘটে গেছে নতুন নতুন পাতা দৃষ্টি গোচর হয়। পুকুরে নিস্তব্ধ দুপুরে হাঁস, পানকৌড়ি শালিক, বক বসে থাকে।কোথাও আবার খেজুর সুপাড়ি গাছ দেখা দেয়।শাশ্বতী দুপুরে পুকুর পারের প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রায় প্রতিদিন দেখত ওর সাথেই পড়ত নিম্মি। সূর্যাস্তের আগেই চলে আসতো। সেই দিনটি ছিল বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ নববর্ষ। বাড়িতে, দোকানে সবাই দেবী লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশ দেবতার পুজো করা হচ্ছে। মাইক বাজছে, ঢাকের শব্দে মুখরিত চারিদিক। সব বাচ্চাদের সাথে শাশ্বতীও খেলতে মশগুল। পুজোর মন্ত্র উচ্চারিত হচ্ছে। বড়রা কেউ পুজোর কাজে কেউবা আবার রান্নার কাজে ব্যস্ত। পুজো করতে বসে পুরোহিত মহাশয় হঠাৎ বলেন "আরে ঘটের থেকে জল পরে যাচ্ছে, অগত্যায় নিম্মির বাবার ছুটলো কুমোরটুলিতে মাটির ঘট আনতে আবার তিনি জল ভরে দেখে শুনে নিয়ে এলেন। পুজো আরম্ভ হল। নিম্মির বাবা মোটরবাইকটি স্ট্যান্ড করেই রেখে ছিলেন। মোটর বাইকটি পরে গেলো। উঠিয়ে রাখা হলো কিন্তু তেলের ট্যাঙ্কটি ফেটে গিয়ে তেল গড়িয়ে পরে যাচ্ছে সেটা কেউই বুঝতে পারেন নি। ধূপের ধোঁয়া, ফুলের সুগন্ধ কেউ কিছুই বুঝতে পারেনি। পেছনে তাকাতেই চারিদিকে আগুন। যে যার মত ছুটছে প্রাণ বাঁচাতে। সাগরিকা খুঁজছে শাশ্বতীকে। হঠাৎ ধোঁয়ার মধ্যে চোখ গেল নীল রঙের লেহেঙ্গা পরা বাচ্চাটির দৌড়াচ্ছে বাঁচতে আর সেই আগুন আরও তার শরীরে ধরে যাচ্ছে।মাইক, মন্ত্র, ঢাক সব স্তব্ধ। শুধুই চিৎকার আর হা হাকার। সারা শরীর ঝলসে গেছে। সব শেষ।সাগরিকা নিস্তব্ধ পাথরের মতো হয়ে গেছে। সে নিজে হাতেই সাজিয়ে ছিলেন। তিনি তখন ও কী বুঝতে পেরেছিলেন এটাই সে তাঁর মেয়েকে শেষ সাজাবে! এখন ও আর কথা বলে না। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে শুধু মাথা নাড়ে। প্রতি বছর নববর্ষ এসে আর ও খুঁজতে থাকে শাশ্বতীকে। নববর্ষ দিনটি ওদের বাড়িতে কালো ছায়ার মতো অন্ধকার ছেয়ে থাকে।

<<Prev1234Next>>

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com