নতুন বছরের আলো
সকাল থেকেই গলিটা উৎসবের রঙে সেজেছে। চারদিকে নববর্ষের আনন্দের প্রস্তুতি—নতুন জামার খুশি, সুগন্ধি পিঠে-পায়েসের মিষ্টি গন্ধ, অতিথিদের জন্য সাজানো মিষ্টির থালা। কোলাহল, হাসি-আনন্দে ভরে উঠেছে চারপাশ। কিন্তু এই সব কোলাহলের মাঝেও ছোট্ট তিতিরের মন ভারী।
তিতিরের মা মাধবী পাড়ার নামী দামী বড় লোকেদের বাড়িগুলোতে কাজ করেন। আজও সকালে কাজে বেরিয়ে গেছেন, আর তিতির এক কোণে চুপচাপ বসে আছে। ওর নববর্ষ কেমন যেন অন্যরকম। নতুন জামা নেই, বিশেষ খাবার বলতে এক থালা পান্তাভাত। পাড়ার অন্যান্য শিশুদের উচ্ছ্বাস দেখে ওর ছোট্ট হৃদয়ে একটা হাহাকার জেগে ওঠে।
পাড়ার একদম শেষ বাড়িটায় থাকেন অর্পণদা, একজন চিত্রশিল্পী। বাড়ির সামনে বড় একটা ক্যানভাস রেখে মনোযোগ দিয়ে কিছু আঁকছেন তিনি। কৌতূহলী তিতির ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
— “দাদা, কী আঁকছেন?”
অর্পণ মিষ্টি হেসে বলে, “নতুন বছরের আনন্দ। তুই কি জানিস, আনন্দ মানে শুধু নতুন জামা বা ভালো খাওয়া নয়? আনন্দ মানে ভাগ করে নেওয়া।”
তিতির কিছু বুঝতে পারে না, কিন্তু অবাক হয়ে দেখে, অর্পণদা ওরই ছবি আঁকছেন—একটা ছোট্ট মেয়ে, যার চোখে অপার বিস্ময়! ক্যানভাসে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে তার অব্যক্ত অনুভূতি।
বিকেলের দিকে অর্পণদা ওর হাতে তুলে দেয় নতুন জামা আর সুন্দর মোড়ানো ছোট্ট একটা প্যাকেট।
— “তিতির, এটা তোর জন্য নববর্ষের উপহার। আর জানিস, এই প্যাকেটটায় কী আছে?”
তিতির বিস্মিত চোখে মাথা নেড়ে না বলে।
— “এতে আছে তোর হাসি! আমি তোর ছবি এঁকেছি, এটা প্রদর্শনীতে যাবে। তুই যেভাবে হাসছিস, সেটাই হল নতুন বছরের আসল আনন্দ।”
তিতিরের চোখে জল চলে আসে, কিন্তু সে হাসে। সত্যিই, নতুন বছরের আনন্দ মানে শুধু কিছু পাওয়া নয়, বরং কারো মুখে হাসি ফোটানোই সবচেয়ে বড় পাওয়া। অর্পণদার দেওয়া উপহার শুধু নতুন জামা নয়, বরং ছিল একটা অনুভূতি, যা সারা জীবন তিতিরের মনে থাকবে। নববর্ষের নতুন আলো যেন আজ সত্যিই ওর হৃদয়কে আলোকিত করে দিল।