Logo
logo

গল্প / কাহিনী

এসো হে বৈশাখ

চৈত্র মাসের প্রায় শেষ আর কিছুদিন পরেই বেজে উঠবে গাজনের বাজনা। একটি বছর শেষ হয়ে যাবে, সাথে সাথে শেষ হবে অনেক হিসাব নিকেশ, চাওয়া পাওয়া। সাতসকালে এইসব সাত পাঁচ এলোমেলো চিন্তাভাবনা করতে করতে নৈহাটি লোকাল থেকে বেলঘড়িয়া স্টেশনে নেমে ঝরনা হন্ হন্ করে পা বাড়ায় নবীন পল্লীতে ওর কাজের বাড়ির উদ্দেশ্যে। যদিও আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই গায়ে, হাত পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা ঝর্ণার। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কালকে প্রচুর জামা, কাপড়, দরজা-জানালার পর্দা সোফার কুশন, কভার কাচাকাচি করতে হয়েছে। তারপর ছিল ঘর ঝাড় পোচ। উপরন্তু গিন্নিমা বলে দিয়েছেন আজ একটু তাড়াতাড়ি যেতে। নতুন বৌমাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে বেড়োবেন। নতুন বছরের প্রিয়জনদের সাথে কিছু উপহার বিনিময় ওই আর কি.. মনে মনে ঝর্ণা ভাবে হাতে টাকা থাকলে বড়লোকদের ইচ্ছে পূরণ আর গরিব লোকদের পেটের খিদে মেটানোর মধ্যে ফারাকটা। ওর নিজের মেয়ে দুর্গার মুখটা বারবার মনে পড়তে লাগল। হাতে যদি টাকা থাকতো বাপ হারানো মেয়েটির জন্য দুটি জামা কিনে দিতে পারতো।কারণ তার তো আপাতত কোনো ভালো জামা নেই। দিল্লিতে কাজ করতে গিয়ে ঝর্ণার স্বামী ফিরেছিল এক গা জ্বর নিয়ে। তারপর এক সপ্তাহ এদিক ওদিক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল মানুষটা। তখন মেয়েটার বয়স মাত্র তিন বছর সেই থেকে রুটি রুজির সন্ধানে ঝর্ণার বাইরে বেড়োনো। মাঝখানে কেটে গেছে সাত সাতটা বছর। এদিক-ওদিক ঘুরে বছর দুয়েক হল বেলঘড়িয়াতে সারা দিনের এই খাওয়া পড়ার কাজটি জোগাড় করতে পেরেছে। মাইনে মোটামুটি চলনসই হলেও সারা মাস কাজ করে যা পায় তাতে নিজের ও মেয়ের পেটের ভাত জুগিয়ে আর কিছুই করার কথা চিন্তা করা যায় না। তার ওপর আছে মেয়ের পড়ার খরচ। যাইহোক এই সকল এলোমেলো সব ভাবনাকে সাথে নিয়েই কাজের বাড়ি পৌঁছয় ঝর্ণা। সেদিনকার সকল কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে নতুন বৌমা, দিয়াকে নিয়ে কেনাকাটা করতে বেড়িয়ে পড়েন গিন্নীমা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে ওরা ফিরে আসে। ঝর্নাও সবকিছু গুছিয়ে বেড়োতে যাবে এমন সময় দিয়া বলে, "দাঁড়াও ঝর্ণাদি তোমার মেয়ের জন্য দুটি জামা কিনেছি। একটা লাল আর একটা নীল। ওই দুটি জামা পরে দুর্গাকে পুরো লালপরী আর নীলপরী লাগবে। নাও গুছিয়ে নাও দেখি।

মাস দুয়েক হল এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছে দিয়া, ভারী মিষ্টি মেয়ে। তবুও ঝর্ণা একটু ইতস্তত করে বলে, "কিন্তু বৌদিমনি তোমার শাশুড়ি মা যদি জানতে পারেন তাহলে কুরুক্ষেত্র বাঁধাবেন।" তাই ভেবে নিতে কেমন যেন লাগছে।

একটু মিষ্টি হেসে দিয়া বলে, মাকে আমি বলেছি, জলের দরে বিকিয়ে দিক ছোটখাটো দুঃখ কষ্ট, বদলে মজবুত হোক আমাদের সকল সম্পর্ক গুলো। তুমি জামাগুলো নাও, আর শাশুড়ি মা কিছু বলবেন না আমাকে।

জামাগুলো নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ায় ঝর্ণা। এক ঝলক চৈতি বাতাস ছুঁয়ে যায় ওকে। মনটা বড় হালকা লাগছে আজ। সত্যি তো কত নতুন সম্পর্ক, নীতি বন্ধুত্ব তৈরি হয় পথের আঁকে বাঁকে। আজ বাড়ি ফিরে মেয়েটাকে বলবো নতুন মাসীমনি পয়লা বৈশাখে ওর জন্য নতুন জামা দিয়েছে।

ট্রেনের সীটে বসে গা এলিয়ে জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে নতুন জামার গন্ধটা অনুভব করার চেষ্টা করে ঝর্ণা। বড্ড খুশি হবে মেয়েটা। সেই খুশির ঝলক উঁকি দেয় ঝর্নার চোখে মুখে।

<<Prev2345Next>>

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com