অঞ্জলি লহ মোর
ঘর বাড়ি দোকানে দোকানে ঝার পোঁচ,
আলপনা এঁকে রেখে পল্লব ঘট
চাঁদমালা সাজানো, লক্ষ্মী গণেশের আরাধনা
স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা নতুন হালখাতার উদ্বোধন,
লুচি বোঁদের ম ম গন্ধে মাতোয়ারা
খুশী মনে খরিদ্দারের আগমন।
পুঁটিরামের সন্দেশের সঙ্গে প্যারামাউন্টের ডাব শরবত, ক্যালেন্ডার, কলেজ স্ট্রিট বই পাড়ায়,
প্রকাশক প্রকাশন পাঠকেরা ঝকঝকে পাঞ্জাবীতে
হাজির হয়ে যান আথিতিরা মসৃণ ভাবে মিলেমিশে
আড্ডায়, সাহিত্যের কথায় সবাইকে এক সুতোয় বেঁধে দেয় রোদ চনমনে বৈশাখ।
এসো হে বৈশাখ
ভোরের স্নিগ্ধ কিরণ মেখে তুমি এসো
উদ্দীপ্ত উল্লাসে তোমারে করি বরণ।
প্রখর তপন তাপে রুক্ষ ধরিত্রী
মাঠে মাঠে বহে যায় নিষ্ঠুর হওয়ার করতালি,
আকাশের নীল কপিশ হয়েছে,
অপিচ আমলা পাতায় নাচের রেশ লেগেছে ।
শান্ত বিনম্র আগুন কৃষ্ণচূড়ার ডালে,
আবিরের রক্তিম ঝলক পলাশ বনে।
বিহঙ্গের কলকণ্ঠ নানাস্বরে হরেক সুরে
শমী শাখায় মৌটুসী, ডাকে তার সঙ্গিনীকে।
সব কিছু ভুলে পুরাতনকে রেখে পিছনে
বর্ষ, বরণ করি তোমারে শঙ্খ বাজিয়ে।
অকূল আলো ঝরে পড়ুক আকাশের বুক থেকে,
সিক্ত হোক ধরত্রী আষাঢ়ে শ্রাবণে
সময়ে বর্ষা না হলে শস্য হবে কেমনে?
বিলীন হোক যা কিছু জীর্ণ
সবুজে সবুজে পরিপূর্ণ থাক অরণ্য,
সবুজে ভরিয়ে দাও পৃথিবীর যা কিছু আছে আনাবৃত।
বর্ষ, তোমার কোমল পা দু'খানি রাখ ধরাধামে
আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠুক চতুর্দিক তোমার পদধ্বনি শুনে।
মৃত্যুহীন আনন্দের স্রোত বহে যাক
বাতাসে ভাসুক শেফালি - সৌরভ,
চিরতরে বিদায় নিক মারামারি, হানাহানি,
জিঘাংসা, হত্যালীলার তাণ্ডব।
বেঁধে রেখো আয়লা ইয়াস তোমার শক্ত আঁচলে,
বর্ষ, তুমি এসো অনেক আনন্দ - খুশি নিয়ে এই বছরে।
হে বর্ষ, অঞ্জলি লহ মোর
তোমার শুভাগমনে মধুময় হোক ধরিত্রী।
সবুজ শস্যে ক্ষেগত থাক ভরে
তুষারমৌলি পাহাড়ে কুয়াশার ছায়া যাক সরে,
সুরভিত থাকুক বাতাস, বারুদ গন্ধ হোক উধাও।
মহামিলনের সঙ্গীত ধ্বনিত হোক দিকে দিকে।।