Logo
logo

সাহিত্য / কবিতা

আমার রবীন্দ্রনাথ

আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে একজন রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন, তিনি আমাদের নিজস্ব রবীন্দ্রনাথ। যাঁর সঙ্গে আমরা একা সময় কাটাই, যিনি সুখে-দুঃখে আনন্দ- বিষাদে হাতে হাত ধরে মিশে থাকেন। আমরা প্রতিদিন তাঁকে শ্বাসপ্রশ্বাসের মতন গ্রহণ করি, ইনি এক একজনের কাছে এক একরকম ভাবে ধরা দেন।
একটি আকাশকে অন্য একটি আকাশের সাথে তুলনা করা যায়, একটি সাগরের উপমা হতে পারে অন্য একটি সাগর।
কিন্তু একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কার তুলনা করব, এই সংকট আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে।
কবি নিজেই সমাধান দিয়েছেন তাঁর 'প্রসাদ' কাব্যগ্রন্থে 'উৎসর্গ' কবিতাটিতে।

"শিশির কহিল কাঁদিয়া
তোমারে রাখিব বাঁধিয়া
হে রবি, আমার নাহি তো এমন বল,
তোমা ছাড়া মোর ক্ষুদ্র জীবন
কেবলই অশ্রুজল "।

সত্যিই তো শিশিরের সাধ্য কি সূর্যকে বেঁধে রাখে!

তথাপি কবি কি বলেছেন----

" আমি বিপুল কিরণে ভুবন করি যে আলো,
তবু শিশির কণারে ধরা দিতে পারি,
বাসিতে পারি যে ভালো"।
ভালোবাসা এমনই এক চাবি, যা দিয়ে পৃথিবীর সব দরজা খুলে যায় ।
জীবন সায়াহ্নে জন্মদিন উপলক্ষে শেষ গানটি লিখেছিলেন,
" হে নূতন দেখা দিক আর-বার,
জন্মের প্রথম শুভক্ষণ "।

বারবার তাঁর রচনায় জীবনের জয়গান শুনেছি।
তাঁর সকল গান বিশ্বপ্রকৃতি, বিশ্বপতি ও বিশ্ব মানবের উদ্দেশ্যে রচিত, তাই তিনি বিশ্বকবি।
ছোট্ট রবি বাবামশাইয়ের সাথে উপাসনা গৃহে যেতেন, ঈশ্বর প্রীতির উন্মেষ ঘটায় ব্রাহ্মসঙ্গীতে, নিরাকারের ভেতরে অসীমের খোঁজ ।
জীবন-স্মৃতিতে লিখেছিলেন _
" গাছের বীজের মধ্যে যে অঙ্কুর প্রচ্ছন্ন ও মাটির নিচে যে রহস্য আবিষ্কার হয় নাই ,তাহার প্রতি একান্ত কৌতুহল বোধ করিতাম "।

মহাভারতের বেদব্যাসের কথা আমরা শুনেছি কিন্তু দেখিনি!
একালের বেদব্যাস স্বয়ং কবি।
পৃথার পুত্র তিনিই পৃথিবী।
জীবনপথের পথিক তিনি।
পথের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশবিশেষ তাঁর রচনায় চিরকাল, কঠিন বাস্তব মেনেছেন সহজভাবে। কলম কখনো থামেনি,
প্রকৃতি তাঁর কাছে মা আবার কখন যেন প্রেয়সী, প্রতিটি ঋতুর বিন্যাস অনায়াসেই। পুজা আর প্রেম মিলেমিশে একাকার।
আমার রবীন্দ্রনাথ কেবলই আমার।
আমি ভাগ করতে পারিনে, এ আমার অক্ষমতা।
শেষ করি কবির কথায় তাঁর ৬০ বছরের জন্মদিনে লেখা,
"শেষ সপ্তক" কাব্যগ্রন্থে।

"২৫ শে বৈশাখ চলেছে জন্মদিনের ধারাকে বহন করে মৃত্যুদিনের দিকে।
সেই চলতি আসনের উপরে বসে কোন্ কারিগর গাঁথছে ছোটো ছোটো জন্মমৃত্যুর সীমানায় নানা রবীন্দ্রনাথের একখানি মালা!
২৫ শে বৈশাখের প্রৌঢ় প্রহরে তোমরা এসেছ আমার কাছে।
জেনেছ কী?
আমার প্রকাশে অনেক আছে অসমাপ্ত, অনেক ছিন্নভিন্ন, অনেক উপেক্ষিত।
অন্তরে-বাহিরে সেই ভালোমন্দ স্পষ্ট-অস্পষ্ট খ্যাত অখ্যাত চরিতার্থের জটিল সংমিশ্রণের মধ্য থেকে যে আমার মূর্তি--তোমাদের শ্রদ্ধায় তোমাদের ভালোবাসায় তোমাদের ক্ষমায় আজ প্রতিফলিত।
আজ যারা সামনে এনেছ তোমাদের মালা, তাকেই আমার ২৫ শে বৈশাখের শেষ বেলাকার পরিচয় বলে স্বীকার করে নিলেম, আর রেখে গেলেম তোমাদের জন্য আমার আশীর্বাদ "।

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com