Logo
logo

গল্প / কাহিনী

মন একে একে দুই

সানভির মুডটা আজ অফ।বাইরে থেকে এসে ঢকঢক করে খানিকটা ঠাণ্ডা জল গলায় ঢালল,তবু যেন ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।সেটা বাইরের তাপমাত্রার জন্যে,না অন্তরদহনের জন্যে, ঠিক বুঝতে পারছে না।
নুন চিনি লেবুর রস চাটমশলা দিয়ে একগ্লাস নিম্বুপানি বানিয়ে এসিটা অন করে সোফায় বাবু হয়ে বসল সানভি।নিম্বুপানির স্বাদটা কেমন তেতো লাগল।লেবুটা একটু বেশি কচলানো হয়ে গেছে বোধহয়।চোখ ফেটে জল আসল সানভীর।
কি করে প্রয়াগ পারল ওকে ডিচ করতে!হাউ!কানাঘুষো শুনছিল প্রয়াগ ইদানিং তানিয়াকে ডেট করছে।আজ চাক্ষুষ দেখল।
গত একবছরের রিলেশন প্রয়াগের সাথে সানভির।প্রয়াগই প্রপোজ করেছিল।সব মেয়ের ক্রাশ প্রয়াগের ছফুট লম্বা ম্যাস্কুলার বডি,হিরোর মতো কলেজে বুলেট নিয়ে এন্ট্রি,চোখে ধাঁধা লেগেছিল সানভির।বন্ধুদের বারন সত্ত্বেও ঝাঁপিয়েছিল প্রয়াগের আগুনে,শুনেও শোনেনি,প্রয়াগ একটা প্লেবয়।
ঈশ!সেদিন যদি শুনত।"স্পয়েল্ড ব্র্যাট।ইউ শুড গো টু হেল।"
সানভির ভাবনার মাঝেই মেসেজ ঢুকল ফোনে,"কিরে,বিকেলে ফাঁকা আছিস?"দ্বৈপায়ন।মনে মনে বোঝে সানভি,দ্বৈপায়ন ওকে লাইক করে,ওর আগে পিছে ঘোরে,কিন্তু মুখে কখনো প্রকাশ করেনি।ভালোই লাগে সানভির দ্বৈপায়নের আনুগত্য।কিন্তু এই মুহূর্তে ওর সাথে ভাঁটাতে ইচ্ছে করছে না।
আবার একটু পরে মেসেজের টুং টুং,"চৈত্র সেলের শপিংএ যাবি নাকি?আজকেই কিন্তু লাস্ট।ভেবে দেখ।"
শপিংএর নামে যে কোন মেয়েই একপায়ে খাড়া।সানভিও তার ব্যতিক্রম নয়।শপিং করলে যদি মুড একটু ভালো হয়,এই ভেবে হ্যাঁ বলে দেয় সানভি।
ঠিক বিকেল পাঁচটায় সানভি পৌঁছে যায় গড়িয়াহাট মোড়ে।আজ চৈত্র সংক্রান্তি,কাল পয়লা বৈশাখ।রাস্তায় প্রচুর মানুষের ঢল নেমেছে। দেখে মন ভালো হয়ে যায়।দ্বৈপায়ন আগে থেকেই ওয়েট করছিল।দুজনে ঘুরে ঘুরে দরদাম করে কিছু জিনিষ কেনে।মানে সানভিই সব করে, দ্বৈপায়ন সঙ্গ দেয়।না চাইতেও সানভি তুলনা করে প্রয়াগ ও দ্বৈপায়নের মধ্যে।প্রয়াগের ছিল অন্যকে ডমিনেট করার স্বভাব,বাদ যায়নি সানভিও।সেখানে সাধারণ দেখতে হলেও নজর কাড়ে দ্বৈপায়নের উজ্জ্বল দুটো চোখ আর উদার স্বভাব, অন্যকে সাহায্য করার প্রবনতা।সদ্য ছ্যাঁকা খাওয়া মনটায় একটু হলেও প্রলেপ লাগে।কেন যেন দ্বৈপায়নকে খুব ভরসা করতে ইচ্ছে হয় সানভির। কেনাকাটা সেরে দুজনে ফুচকা খায়। ফুরফুরে হাওয়ায় সানভির লকস কাটা চুল উড়ে এসে মুখে পড়ে।ফুচকা খেতে থাকায় চুল সরাতে পারে না সানভি। দ্বৈপায়ন আলতো করে সরিয়ে দেয়।একটু কি কেঁপে ওঠে সানভি?
টোটো করে বাড়ি ফেরার পথে ওরা দুজন বসেছিল পাশাপাশি।আঙ্গুলে ছুঁয়ে যাচ্ছিল আঙ্গুল‌। দ্বৈপায়ন জিজ্ঞেস করে আস্তে করে,"কাল ফ্রি আছিস?"অদ্ভুত অনুভূতির দোলাচলে আচমকা কেঁদে ফেলে সানভি,সারাদিনের আটকানো কান্না। দ্বৈপায়ন চোখের জল মুছিয়ে সানভির মাথাটা নিজের কাঁধে টেনে নেয়।সানভির সঙ্গে যা যা হয়েছে সবটাই নিজের চোখে দেখেছে দ্বৈপায়ন।সাবধান করেছিল সানভিকে,প্রয়াগের ব্যাপারে।সানভি শোনেনি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে দ্বৈপায়ন।কাঁদুক মেয়েটা।কাঁদলে যদি হালকা লাগে।
সানভির বাড়ি এসে গেছে।চোখ মুছে চুল ঠিক করে দ্বৈপায়নকে বাই বলে সানভি।কেঁদে খানিকটা ভালো লাগছে।ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে।মনে হয় ঝড়বৃষ্টি হবে।আসুক ঝড়,উড়িয়ে নিয়ে যাক সানভির মনের গ্লানিকে খড়কুটোর মতো।বৃষ্টি এসে কমিয়ে দিক অন্তরের জ্বালা।কাল পয়লা বৈশাখ,নতুন সূর্য, নতুন ভোর।আজ সানভির ভালো লেগেছে দ্বৈপায়নের সঙ্গ।মনে হচ্ছে,যেন এরই অপেক্ষায় ছিল সানভি।প্রয়াগ মরিচীকা,দ্বৈপায়ন শান্ত ঝিল।উপমাদুটো দিতে পেরে খুশি হয় সানভি।কষ্ট হলেও প্রয়াগের স্মৃতি মুছে কাল খুব সুন্দর করে সেজে দ্বৈপায়নের সামনে যাবে,ওর মুগ্ধ দুনয়নে নিজেকে হারিয়ে যেতে দেবে সানভি।পয়লা বৈশাখে শুরু করবে এক নতুন জার্নি।
রাতে স্বপ্ন দেখে সানভি,ও আর দ্বৈপায়ন হারিয়ে যাচ্ছে কাশ্মীরের বরফে।দূরে শোনা যাচ্ছে কবিগুরুর গম্ভীর কন্ঠস্বর,
"এসো হে বৈশাখ,এসো এসো.....
মুছে যাক গ্লানি, মুছে যাক জ্বরা.......
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।"

<<Prev1234Next>>

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com