Logo
logo

গল্প / কাহিনী

পিতৃ তর্পন

দূর্গা মা নিজের বাড়িতে চলে এসেছেন । মণ্ডপে মণ্ডপে তারই আরাধনা সারম্বরে পালন করা হচ্ছে । রাত পোহালেই অষ্টমী । বাবাই ভাবছে , কালই মায়ের মনের আশাটা পূর্ণ করবে ।
বাবাইয়ের মা মানসী গোস্বামী । মানসীর খুবই ইচ্ছা , কোনো একটা শুভ দিন দেখে ভালো করে দরিদ্র নারায়ণ সেবা করবেন । সাধ থাকলেও এতো দিন সেই ক্ষমতা ছিল না । সামর্থ ছিল না । মানসীর পুত্র বাবাই সেই কাজটাই কালকের শুভদিনে সম্পন্ন করবে ।
সাত সকালেই মানসী স্নান সেরে , বাবাইয়ের দেওয়া নতুন গরদের শাড়িটা সুন্দর পরিপাটি করে পড়ে নিলো । সবকিছুর আয়োজন বাবাই করলেও , সবকিছু সুষ্ঠু ভাবে না শেষ হওয়া পর্যন্ত মাথা ব্যথা তো মানসীর । কিছুপরেই পাড়ার মণ্ডপে অষ্টমীর অঞ্জলি শুরু হবে । মায়ের ডাকাডাকি তে বাবাই দ্রুত স্নান সেরে নতুন সেরওয়ানী পরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো ।
মণ্ডপে এসে ওরা দেখলো খুব ভিড় । ভিড় তো হবেই । কারণ মাইকে কয়েকদিন ধরেই ঘোষনা হচ্ছে দরিদ্র নারায়ণ সেবা এবং বস্ত্র বিতরণের কথা ।
দূরদুরান্ত থেকে দরিদ্র মানুষেরা এসেছেন বস্ত্র নিতে । অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি হয়ে যাবার পর শুরু হলো বস্ত্র বিতরণ । সবশেষে হবে পংক্তি ভোজন । স্বেচ্ছাসেবকরা সবাইকে একটা লাইন করে দাঁড় করিয়ে দিলো । ঘোষণা হলো , মানসী দেবী মঞ্চে এসেগেছেন । উনিই বস্ত্র নিজের হাতে দান করবেন ।
স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই দরিদ্র নারায়ণ সেবা এবং বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান আরম্ভ হলো । মানসী নিজের মনে বস্ত্র দিচ্ছিলেন , হঠাৎই কেউ একজন লাইন থেকে বলে উঠলেন , "ছোট ঠাকুরঝি , তুমি কেমন আছো ?" মানসীও চমকে উঠে , কে ডাকছে , বুঝবার চেষ্টা করতে লাগলো । গলার আওয়াজটা খুবই পরিচিত মনে হলো । একজন ভদ্রমহিলা মানসীর কাছ থেকে বস্ত্র নিতে এসে বললো , " কি , চিনতে পারলে না তো , ছোট ঠাকুরঝি , আমি তোমার ছোট বৌদি ।" আমার খুব ভালো লাগছে , তুমি এতো মানুষের সেবা করছো । ছেলেও দেখছি তোমার মতোই উদার মনের মানুষ হয়েছে । আজ আমি খুবই অনুতপ্ত , একটা সময়ে আমি তোমার সঙ্গে অনেক দুর্ব্যবহার করেছি ।
(পনেরো বছর পূর্বে )
মানসীর অতীত জীবন খুব একটা সহজ ছিল না । পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে , মানসী ছিল সকলের ছোট । নিজের মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে মা মারা যান । বাবা দুই দাদা এবং দিদির বিয়ে দিয়ে নিজের কর্তব্য করেছেন । কিন্তু চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরই বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে , পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান । মানসীই তখন বাবার দেখাশোনা করতে থাকে । দাদা এবং দিদিরা নিজেদের সংসারের দোহাই দিয়ে সমস্ত দায়িত্ব পাশ কাটিয়ে চলে যায় । দীর্ঘ পনেরো বছর মানসী একাই বাবার দেখাশোনা করেছেন । দায়িত্ব সামলে নিজের বিয়ের চিন্তা আর মাথাতেই আসেনি । একসময় বাবাও মারা যান ।
অবিবাহিত বিয়াল্লিশ বছরের মানসী দাদা বৌদিদের সংসারেই থাকতেন । কিন্তু অবিবাহিতা ননদের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার নিত্যদিনের বিষয় হয়ে উঠেছিল । একপ্রকার বাড়ি থেকে মানসী কে তাড়িয়ে দিতে পারলে ওরা মুক্তি পায় ।
মানসী অত্যন্ত মিষ্টি স্বভাবের । পাড়ার প্রায় সকলেরই কাছে খুবই প্রিয় । মানসীর দৈনন্দিন বাঁধাধরা জীবনের গন্ডির পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটলো পাড়ারই এক বৌদির জন্যে । তিনিই মানসীর সাথে স্থানীয় এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন । প্রাথমিকভাবে মানসী , বিষয়টা কাউকে জানালো না । কারণ সে লোকের কাছে হাসাহাসির পাত্রী হতে চায়না ।
পরিণত বয়সের অবিবাহিত ভদ্রলোকের নাম মিহির গোস্বামী । ব্যবহারে অমায়িক এবং অন্যকে সম্মান দিয়ে কথাবলার স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে । মানসীর নতুন "বন্ধু" মিহির বাবুর শালীনতা বজায় রেখে সম্পর্ক তৈরী করলো ।
একটা সময়ের পর মানসী এবং মিহির বাবুর মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক ধর্মীয় এবং আইন সম্মত ভাবেই পরিণতি পেলো । তারা এখন স্বামী স্ত্রী । বিবাহের পর মানসীর নিজের পরিবারের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকলো না
মিহির বাবুর সোনারপুর স্টেশনে একটা ছোট ভাতের হোটেল আছে । এইটাই রুজিরোজগারের একমাত্র উৎস । খুব ভালো না হলেও , চলে যায় । মানসী অভিজ্ঞ সংসারী । মিহির বাবুর নতুন সংসারের ভার যোগ্য মানুষের কাছেই গেল ।
এইরকমই একটি দিন । মিহির বাবু নিজের হোটেলের দৈনন্দিন কাজে ব্যাস্ত । একটি বছর দশেকের ছেলে , মিহির বাবুর কাছে একটা কাজ চাইলো । ছেলেটার অদ্ভুত শর্ত । বললো তার কোনো টাকা পয়সা দরকার নেই । তার কাজ দেখে মিহির বাবু সন্তুষ্ট হলে , তবেই ছেলেটিকে যেন খেতে দেয় । মিহির বাবু ছেলেটির কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলেন । নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন , " সেটা না হয় বুঝলাম , কিন্তু তুমি থাকো কোথায় , আর তোমার মা বাবা কোথায় থাকেন ? ছেলেটি হাত দেখিয়ে স্টেশনের দুরবর্তী একটা জায়গা দেখিয়ে বলল , "ঐখানেই এক কোনে রাত কাটাই । আমার মা বাবা কেউই বেঁচে নেই।"
ওর নাম পিন্টু , ডাক নাম বাবাই । মিহির বাবু , ব্যাপারটা বোঝার জন্য পিন্টু কে কাজে বহাল করলো । তিনি ও প্রায় সরাদিনই এই হোটেলে থাকেন । সামনে থেকে পিন্টুর দিকে নজর রাখলো । নাহ ! ছেলেটাকে সত্যিই কাজের মনে হচ্ছে । অল্প বয়স , কিন্তু বড় মানুষের মতোই দ্রুত অথচ নিখুঁত কাজ । মিহির বাবু আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করলো , কাজের মধ্যে ফাঁক পেলেই পিন্টু নিজের কাছে রাখা একটা ব্যাগ থেকে বই বার করে গভীর মনোযোগের সঙ্গে পড়ে । মনে হয় ওর যেন পড়াটাই প্রধান কাজ , কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ থাকে না ।
পরিণত বয়সের মিহির বাবুর বুঝতে অসুবিধা হলো না , এই ছেলেটা সম্পূর্ণ অন্য প্রকৃতির । ওর সহৃদয় অভিভাকের প্রয়োজন । পিন্টুর সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা করতে হবে ।
এইরকমই একদিন মিহির বাবু দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরত পথে দেখতে পেলেন , তাদের পিন্টু , স্টেশনের এক কোনে বসে একমনে কি যেন পড়ে যাচ্ছে । এতোমানুষের চিৎকার চেঁচামেচি কিছুই যেন ওকে স্পর্শ করছে না । পিন্টু কে না বুঝতে দিয়ে , মিহির বাবু কাছে গিয়ে দেখলো , পিন্টু কোনো একটা ক্লাসের ইংরেজি ব্যাকরণ পড়ছে একমনে ।
সারাটা রাস্তায় মিহির বাবু পিন্টু কে নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরলো । মানসীর অন্যদিনের তুলনায় মিহির বাবু কে অন্যমনস্ক এবং খুবই গম্ভীর মনে হলো । মানসী জিজ্ঞাসা করলো কিছু হয়েছে নাকি ? অন্যমনস্ক ভাবেই মিহির বাবু বললো , " হ্যাঁ , তোমার সঙ্গে কিছু পরামর্শের প্রয়োজন আছে । সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে , আমি স্নান করে এসে বলছি ।
রাতের খাবার খেতে খেতে মিহির বাবু মানসী কে বললো , আমাদের দুজনের যা বয়স হয়েছে তাতে নিজেদের আর সন্তানের কোনো সুযোগ নেই । অথচ আমাদের সবকিছু দেখাশোনা করার জন্য নিজের সন্তানের মতোই কাউকে প্রয়োজন । এমনই কাউকে যদি উপযুক্ত মনে হয় , তোমার কোনো আপত্তি নেই তো ? মানসী বললো তোমার কোনো কাজেই আমার আপত্তি থাকার কথা নয় । কারণ , তুমি আমার জীবনে কি , সেটা শুধুমাত্র আমিই জানি । আজকে আমি যে একটা সামাজিক জীবন কাটাচ্ছি , একটা সংসার পেয়েছি , সবটাই তোমার জন্য । মিহির বাবু , মানসীর উত্তরে যা বোঝার বুঝে নিলো ।
মিহির বাবু নিজের পরিকল্পনার কথা , মানসীর কাছে খুলে বললো না । পরের দিন যথারীতি হোটেলে চলে এলেন । দোকানে দুইজন কর্মচারী সকালেই দোকান খুলে ঝারাপোছা করে খরিদ্দারদের পছন্দমত রান্না শুরু করে দেয় । মিহির বাবু কর্মচারীদের জিজ্ঞাসা করলো পিন্টু এসেছে কিনা । পিন্টু সাথে সাথেই দোকানে ঢুকে , মিহির বাবুর কাছে এসে বললো , বাবু , আমি এসেগেছি । চিন্তা করবেন না । আমি সমস্ত চেয়ার এবং টেবিল ঝেরেমুছে দিয়ে , থালা বাসন পরিষ্কার করে রান্নার জায়গায় দিয়ে দিচ্ছি ।
পিন্টু যাই কাজ করুক না কেন , সবই মনোযোগ দিয়ে করে । কলের নিচে বসে একমনে বাসনগুলো পরিষ্কার করছিলো । মিহির বাবু আস্তে করে পিন্টুর কাছে এসে নিচু হয়ে মাথায় হাত রেখে বললো , আজকে কি দিন তোর মনে আছে , বাবা ? স্নেহভরা সম্মোধনে পিন্টু অবাক হয়ে বললো , কেন বাবু , আমার কোনো অন্যায় হয়েছি কি ? মিহির বাবু , পিন্টু কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল , আরে না না বাবা , তুমি কোনো অন্যায় করতেই পারো না । আর একটা কথা , আমাকে বাবু নয় , বাবা বলে ডাকবি , কেমন ? কিন্তু তোকে যেটা জিজ্ঞাসা করলাম, আজকের দিনটি কি ? পিন্টু বলল , আমিও জানি না আজ কিসের দিন । আমার কাছে সবদিনই এক বলে মনে হয় । মিহির বাবু কেঁদে ফেললেন । নিজেকে সামলে বললেন , নারে বাবা , এখন তো দূর্গা পূজো চলছে । আজ মহাষ্টমী । তোর জন্যে কিছু জিনিষ এনেছি , তুই আর আমি আজ এক জায়গায় যাবো । চল তাড়াতাড়ি আমরা বেরিয়ে যাবো । আমার অন্য কর্মচারীরা দোকান দেখে নেবে ।
পিন্টুর জন্য মিহির বাবু নতুন প্যান্ট , জামা আর জুতো এনেছেন । পিন্টু অবাক হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো । এবার মিহির বাবু খানিকটা বকা দিয়ে বললো , যা বললাম তাড়াতাড়ি করে নে , এইগুলি পড়ে নে । আমরা বেড়িয়ে যাবো । কোনো কথা না বলে পিন্টু চোখ মুখ ধুয়ে নতুন জামা প্যান্টটা পড়ে নিলো । হতদরিদ্র হলেও , পিন্টু সুশ্রী এবং ফর্সা চেহারার । মিহির বাবু দোকানের কর্মচারীদের সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছিলো । এই সময়ে পিন্টু মিহির বাবুর সামনে এসে বললো , দেখো আমি তৈরী হয়ে গিয়েছি । চলো কোথায় আমাকে নিয়ে যাবে ।
পিন্টুকে নতুন জামা কাপড়ে অপূর্ব লাগছে । মিহির বাবু মানসীর জন্য আজ মহাষ্টমীর উপহার নিয়ে যাচ্ছে । মানসী নিশ্চিত শুধু খুশিই হবে না , সুখীও হবে ।
বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে মিহির বাবু বাচ্চাদের মতো চিৎকার মানসী কে ডাকতে লাগলো । মানসী তাড়াতাড়ি এসো , দেখো তোমার জন্য দেবতার আশীর্বাদ এনেছি ।
মানসী পরিমরি করে দৌড়ে এলো , বলতে লাগলো ঠাকুরের আশীর্বাদে তো তোমাকে পেয়েছি , ঠাকুর আমার ওপর এতো দয়া , আরও আশীর্বাদ আমার জন্য রেখেছেন ! দেখাও দেখাও , আমার আর ধৈর্য ধরছে না । হাসি মুখে মিহির বাবু , মানসীর সামনে দেব শিশু সদৃশ পিন্টুকে এগিয়ে দিলো । নাও তোমার মহাষ্টমীর মাদুর্গার আশীর্বাদ । ওই আমাদের পুত্র , আমাদের অন্ধের যষ্টি , আমাদের ভবিষ্যৎ ।
মানসী , পিন্টু কে দেখে অঝোরে কাঁদতে লাগলো । স্বামীকে বললো তুমি আমার জন্য এতো চিন্তা করো , আমাকে তুমি এতো ভালো বাসো ! হে ঈশ্বর আমি যেন এতো ভালোবাসার , এতো সম্মানের যোগ্য হতে পারি । আমাকে তুমি এই আশীর্বাদ করো । এগিয়ে এসে মানসী স্বামীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো । সবাইকে অবাক করে দিয়ে পিন্টুও মানসী এবং মিহির বাবুকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো । খুবই অস্ফুট স্বরে মা এবং বাবা বলে দুজনকেই সম্মোধন করলো । একদমই হতোচকিত হয়ে মানসী এবং মিহির পিন্টুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো । এই বাঁধন অটুট , দেবতার আশীর্বাদ ।
পিন্টু খুবই মেধাবী । মিহির বাবুর জহুরির চোখ । বাড়ির কাছেই একটা নামী স্কুলে পিন্টু পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হলো । পিন্টু বুজতে পারলো ঈশ্বর তাকে নিজের বাবা মার কাছে এনে দিয়েছে । যথাসম্ভব এর মূল্য দিতে হবে । মানসী এবং মিহির বাবুর জীবন এখন সন্তান সুখে সমৃদ্ধ । "মা" "বাবা" সম্মোধনে নিজেদের কে সার্থক বলে মনে হচ্ছে । পিন্টুর জীবন স্বাভাবিক ছন্দে এগিয়ে যেতে থাকলো ।
একসময় পিন্টু মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাঁচটি করে লেটার পেয়ে পাশ করলো । বাবা পিন্টু বলে ডাকলেও মা বাবাই বলেই ডাকে । পিন্টু সংসারের নয়নের মনি । মিহির বাবু পিন্টু কে তারাতলায় AIIHM এ হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়বার জন্য ভর্তি করে দিলেন । একসময় অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে MBA উত্তীর্ন হয়ে গেল । পিন্টু এখন নামী শেফ । বহু পাঁচতারা হোটেল পিন্টু কে পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ডাকাডাকি করে । কিন্তু বাবা কে পিন্টু পরিষ্কার বলে দেয় , "বাবা , দেখো, অর্থের জন্য আমাকে চাকরি করতে হবে । কিন্তু আমাদের নিজের হোটেল কে আধুনিক ভাবে সকলের সামনে আনা আমার প্রধান কর্তব্য ।" মিহির বাবু মনোযোগ দিয়ে পিন্টুর ইচ্ছা এবং পরিকল্পনার কথা শোনে । গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে ।
পিন্টু সোনারপুর স্টেশন থেকে সরে এসে একেবারে বড় রাস্তার উপর পাঁচ কাঠা জমি কিনে ফেললো । এখানেই মিহির বাবুর স্বপ্নের পাঁচতারা হোটেল তৈরী হবে । সমস্ত পরিকল্পনা তৈরী । সরকারের যাবতীয় আইনি অনুমোদন জোগাড় হয়ে গিয়েছে । পিন্টু ইতিমধ্যেই স্টেশনের হোটেল থেকেই "অন লাইন" খাবার অর্ডারের ব্যবস্থা করে ফেলেছে । সুযোগ পেলে বাবার হোটেল ব্যাবসা কে সমস্ত দেশে "চেইন মার্কেটিং" এর ব্যবস্থা করবে । বাবার সঙ্গে একরাশ স্বপ্নের ঝুড়ি নিয়ে পিন্টু রোজই আলোচনা করে । মিহির এখন ছাত্র , পিন্টু শিক্ষক ।
দুঃখ না থাকলে সুখ হয়তো সম্পূর্ণ হয়ে না । অকস্মাৎ মিহির বাবু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকে চলে গেলেন । মানসী মানসিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গেল । কিন্তু মিহির বাবু ছিলেন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা । রেখে গেলেন ছেলে বাবাই কে । মায়ের হাত শক্তভাবে পিন্টু আঁকড়ে ধরলো । অভয় দিলো মাকে , "কোনো ভয় নাই"!
পাঁচ ছয় বছর পার । সোনারপুর স্টেশনের ছোট ভাতের হোটেলে পুনর্জন্ম হয়েছিল পিন্টুর । সে এখন মহীরুহ ! হোটেলের নাম "মিহির মানসী গ্ৰুপ"। নামি পাঁচতারা হোটেল । পিতৃ স্মরণে মহালয়ার দিন পিন্টু পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে তার "জন্ম দাতা" মিহির বাবুর উদ্দেশ্যে পিতৃতর্পন নিবেদন করলো । মা মানসীর উপস্থিতিতে ব্রাহ্মণ ভোজন অনুষ্ঠিত হলো ।
আজ সেই মহাষ্টমীর পুন্যতিথি । সেলিব্রিটি শেফ পি গোস্বামী । কিন্তু মানসীর আদরের "বাবাই"। মার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করলো দরিদ্র নারায়ণ সেবা এবং বস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে ।
পিন্টু নিজের দামি গাড়িতে মা মানসী কে নিয়ে নতুন পাঁচতারা হোটেলে উপস্থিত হলো । বাবার স্মরণে আজ অনুষ্ঠিত হবে দেশ বিদেশের শেফদের নিয়ে "গোস্বামী ইন্টারন্যাশনাল ফুড সামিট" সেমিনার । স্বর্গীয় মিহির গোস্বামীর স্বপ্নের উড়ান l

<<Prev1234Next>>

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com