জনাইয়ের প্রসিদ্ধ মনোহরা মিষ্টি
উপকরণ:-
১. ফুল ফ্যাট মিল্ক- ১লিটার
২. ভিনিগার/ ছানা কাটার পাউডার- ২ টেবিল চামচ
৩. চিনি - ৫০০ গ্রাম
৪. গুঁড়ো দুধ - ২ টেবিল চামচ
৫. পেস্তা বাদাম গুঁড়ো - ৬ টা
৬. ছোট এলাচ গুঁড়ো - ৬ টা
৭. কিসমিস - পরিমাণ মত
৮. ঘি - ১ ও ১/২ টেবিল চামচ
৯. বাটার পেপার বা কলাপাতা - পরিমাণ মত।
প্রনালী:-
প্রথমে একটি কড়াইতে দুধ ভালো করে গরম করে নিয়ে এবার দুধে বলক এলে গ্যাসের ফ্লেম লো করে দিতে হবে। এবার ভিনিগার বা ছানা কাটার পাউডার অল্প জলে গুলে দুধের মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত নেড়ে নেড়ে ছানা প্রস্তুত করতে হবে। এরপর একটি ছাঁকনি তে বা সাদা কাপড়ে ছানা ঢেলে নিয়ে সম্পূর্ণ জল নিংড়ে নিতে হবে। এবার ছানা আবারও ভালো করে জলে ধুয়ে এবং আবারও ভালো করে জল ঝরিয়ে একদম নিংড়ে নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে ছানা নিয়ে একদম নরম করে হাতের তালুর সাহায্যে ছানা মেখে নিতে হবে। এরপর কড়াইতে ১ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে গরম করে নিতে হবে। এবার গ্যাস মিডিয়াম ফ্লেম করে তাতে ৫০ গ্রাম চিনি দিয়ে ও ২৫০ গ্রাম ছানা দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে। এবার কিছুক্ষণ নাড়ার পর আবারও ৫০ গ্রাম চিনি ও বাকি ২৫০ গ্রাম ছানা দিয়ে আবারও ভালো করে নাড়াচাড়া করতে হবে। এবার ছানা একটু শুকিয়ে এলে তাতে গুঁড়ো দুধ, পেস্তা বাদাম গুঁড়ো ও ছোট এলাচ গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করে ছানার ডো একদম শুকিয়ে ঝরঝরে করে ফেলতে হবে। এবার একটি পাত্রে ঘি মাখিয়ে তাতে ছানার ডো ভালো করে ছড়িয়ে দিয়ে রেখে ১০ মিনিট ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর ছানার ডো থেকে হাতের তালুর সাহায্যে চেপে চেপে গোল গোল মিষ্টি বানিয়ে নিতে হবে। তারপরেই মনোহরার মূল বিশেষত্ব চিনির কোটিং বানানোর জন্য কড়াইতে বাকি ৪০০ গ্রাম চিনি ও তার অর্ধেক জল দিয়ে ২ মিনিট চিনির সিরা ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার এক তার বিশিষ্ট চিনির সিরা তৈরী হয়ে এলে গ্যাসের ফ্লেম একদম কমিয়ে দিতে হবে। এরপর একটি চামচের সাহায্যে পাকানো মিষ্টি গুলো চিনির গাঢ় সিরার মধ্যে ভালো করে ডুবিয়ে চামচের সাহায্যে তুলে একটি বাটার পেপার বা কলাপাতায় ঘি মাখিয়ে তার ওপর রাখতে হবে। এই সময় মিষ্টির ওপর গোটা কিসমিস দিয়ে সাজাতে হবে। এই ভাবে সব মিষ্টি গুলো তৈরী করে নিয়ে কয়েক ঘন্টা রেখে দিলেই চিনির কোটিং একদম জমে শক্ত হয়ে যাবে। চিনির কোটিং একদম শক্ত হয়ে গেলে মিষ্টি গুলো খুব সহজেই বাটার পেপার বা ঘি মাখানো কলাপাতা থেকে উঠে আসবে। এই ভাবেই একদম রেডি হয়ে যাবে "জনাইয়ের প্রসিদ্ধ মনোহরা মিষ্টি।"
বি.দ্র- জনাইয়ের এই প্রসিদ্ধ মিষ্টি কে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন তা নিয়ে কিছু মত পার্থক্য আছে।
১. কথিত আছে ব্রিটিশ আমলে এক ব্রিটিশ ব্যক্তি হুগলির জনাই তে ঘুরতে এসে ময়রাদের বলেছিলেন এমন মিষ্টি প্রস্তুত করতে যা ৭ দিন অবধি ভালো থাকবে। যেহেতু তখনকার দিনে ফ্রিজের ব্যবহার ছিল না। তাই প্রখ্যাত ময়রা ভীমচন্দ্র নাগের বংশের যারা জনাই তে ছিলেন, তারা তখন এই মনোহরা মিষ্টি আবিষ্কার করেছিলেন।
২. আবার কথিত আছে এই মিষ্টি ভীমচন্দ্র নাগের বাবা পরাণ চন্দ্র নাগ সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি বর্ধমানের রাজার বাড়ির খাস ময়রা ছিলেন।
৩. আবার জনাই এর রাজা কালীপ্রসাদ মুখার্জীর বাড়ি কালী প্রসাদ ভবনে একবার মিষ্টির ভিয়েন বসেছিল। ললিত ময়রা নামে এক ময়রা রাজার খাস ময়রা ছিলেন। একঘেয়ে মিষ্টি খেয়ে রাজা খুব বিরক্ত হয়ে পরেছিলেন। তখন সেই ললিত ময়রা বুদ্ধি করে এই মিষ্টি টি বানিয়ে রাজার কাছে উপস্থাপন করতেই রাজা খেয়ে বলেছিলেন " এ যেন মন হরণ করে নেওয়া মিষ্টি।" তখন থেকে এর নাম হয়ে গেলো "মনোহরা" ।
মূলত আগেকার দিনে ফ্রিজ ছিলনা বলে মিষ্টি দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য ও ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচানোর জন্য মিষ্টির ওপর এই চিনির কোটিং ব্যবহার করা হতো। যাতে মিষ্টি তে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ না করে। তাই আগেকার দিনে এই মিষ্টি খাওয়ায় আগে ওপরের চিনির কোটিং ভেঙে ভেতরের ছানার অংশ খাওয়া হত।
পুজোর সময় বাড়িতে অতিথি এলে খুব অল্প সময় ও খুব অল্প উপকরণেই তৈরী হয়ে যাবে এই "মনোহরা" মিষ্টি। এমনকি দুর্গা পুজোর ভোগেও মা দুর্গা কে এই মিষ্টি তৈরী করে নিবেদন করলে পুজোর আয়োজনেও একটা ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের ও বনেদিয়ানার ছাপ পরিস্ফুট হয়ে থাকবে।