Logo
logo

সাহিত্য / কবিতা

প্রবন্ধ- অজানা এক বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত

সালটা ১৯২৯, দিনটা ছিল আটই এপ্রিল, হঠাৎ করেই ইম্পেরিয়াল লেজিস লেটিভ কাউন্সিলের হলে জোড়া বিস্ফোরণ ঘটে, প্রাণ বাঁচাতে সকলেই এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। ঠিক সেই সময়, দর্শকদের আসন থেকে দুই অকুতোভয় যুবক উঠে এসে চিৎকার করে বলে, 'ইনক্লাব জিন্দাবাদ', 'নিপাত যাক সাম্রাজ্যবাদ'।

ওই দুই যুবকের মধ্যে একজনকে আমরা খুব ভালোভাবে চিনি যিনি হলেন ভগৎ সিং কিন্তু আর একজন যুবক সেই যুবকের পরিচিতি ইতিহাস আমাদের কখনো জানান দেয়নি সেই যুবক ছিলেন বঙ্গ সন্তান বর্ধমানের ছেলে ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়নি তার কোন পরিচয়। লেখাও হয়নি তাকে নিয়ে কোন কাহিনী তিনি আর কেউ নন তিনি ছিলেন বর্ধমানের ছেলে বটুকেশ্বর দত্ত।

কে বা কারা বা কেন এই বঙ্গ সন্তানের কথা ইতিহাসের পাতায় তুলে ধরেনি সেটা আলোচ্য বিষয় নয় আলোচ্য বিষয় হলো বঙ্গসন্তান বটুকেশ্বর দত্তের ভারতকে স্বাধীন করতে তার অনবদ্য অবদান।

১৯১০ সালের ১৮ই নভেম্বর বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গ সন্তান বটুকেশ্বর দত্ত। বাংলায় ছোটবেলার পড়াশুনা আর শৈশব কাটানোর পর, উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি যান কানপুরে।
সেখান থেকে তিনি স্নাতকোত্তর হবার পর, কানপুরেই তাঁর সাথে আলাপ হয় ভগৎ সিং এর। এরপরে ভগৎ সিং এবং অজয় ঘোষের সাথে মিলিত হয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করেন হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের।

যতীন্দ্রনাথ দাস, যিনি ছিলেন বোমা বাঁধায় একজন দক্ষ বিপ্লবী, তাঁকে এই বটুকেশ্বর দত্তই সংগঠনের সাথে যুক্ত করেছিলেন।

তৎকালীন দিল্লির কেন্দ্রীয় সংসদে পাবলিক সেফটি এবং ট্রেড ডিসপুট বিল পেশ হবার কথা।
এই দুটি বিলের প্রতিবাদের জন্য সংসদে হামলা করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সেই হামলার নেতৃত্ব দেবে কে?সংগঠন থেকে বেছে নেওয়া হয় দুই অকুতোভয় যুবককে। একজন ছিলেন ভগৎ সিং ,অন্যজন হলেন বঙ্গ সন্তান বটুকেশ্বর দত্ত।
সংসদে হামলা চালানোর পর দুই যুবক কিন্তু বিপ্লবীর আসন থেকে সরে যাননি। বরং সেখানেই দাঁড়িয়ে দেশ মাতৃকার বন্দনায় নিমজ্জিত হয়েছিলেন।
গোটা সংসদ তাঁদের সাথে ইনক্লাব জিন্দাবাদ ধ্বনিতে উচ্চারিত হয়েছিল। সংসদে থাকা কাগজপত্র উড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। ব্রিটিশদের আসতে দেখে অকুতোভয় দুই যুবক একটুও ভীত হয়ে যাননি বরং নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছিলেন মাতৃ বন্দনা করতে করতে।

সেই সময় ব্রিটিশ সরকারের কাছে আতঙ্ক ছিল বাঙালি তাই বটুকেশ্বর দত্তকে তারা জেনে রাখতে পারেননি। সাজা হয়েছিল কালাপানি জেলের আন্দামানের সেলুলার জেলে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু লাহোর বিস্ফোরণ মামলায় তার বিরুদ্ধে কোন পোক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দেশকে স্বাধীন করার জন্য বটুকেশ্বর দত্তের এই অবদান বিশ্ববাসী কিন্তু মনে রাখেনি। তাঁকে নিয়ে চর্চা করা হয়নি ইতিহাসের পাতায়। জীবিত থাকাকালীন প্রাপ্য সম্মানটুকুও জোটেনির তাঁর কপালে।
ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছিল ঠিকই,কিন্তু সেই স্বাধীন ভারতে জোটেনি তাঁর কপালে কোন সরকারি চাকরি। দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয়েছে তাঁকে।

অভাব অনটনের মধ্যে থাকায় পরবর্তীকালে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয় বটুকেশ্বর দত্ত। বিহারের পাটনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন তিনি।
পার্টনার এক সাংবাদিকের খবরে টনক নড়ে যায় সরকারের।
সাংবাদিক লিখেছিলেন খবরের কাগজে,' বটুকেশ্বর দত্তের মতো বিপ্লবী এদেশে জন্ম নেওয়া বৃথা। ঈশ্বর ভুল করেছেন।'
এই খবরে তোলপাড় হয়ে যায় সারা দেশ। তড়িঘড়ি করে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দা দেখা করতে আসেন তাঁর সাথে ।

বাড়িয়ে দেন চিকিৎসার জন্য অর্থের সাহায্য। ততদিনে বটুকেশ্বরের ধরা পড়েছে ক্যান্সার। তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় দিল্লির হাসপাতালে।

কিন্তু নিয়তির বিধানে ১৯৬৫ সালের ২০ শে জুলাই সকলকে কাঁদিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করেন বটুকেশ্বর দত্ত। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল ভগৎ সিং আর রাজগুরুর পাশে যেন তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর শেষ ইচ্ছা মতোই তাঁদের পাশেই স্থান হয়েছিল তাঁর।

বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং মোদীর উদ্যোগে বর্ধমান স্টেশনের নাম হতে চলেছে বটুকেশ্বর দত্ত।

ইতিহাসের পাতায় হয়তো আগামী দিনে আমরা তাঁকে ফিরে পেতে চলেছি। জানতে পারবো তাঁর জীবনের অজানা কাহিনী। স্বাধীনতায় তাঁর অবদান।

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com