Logo
logo

সাহিত্য / কবিতা

প্রবন্ধ - "তরুণ তুর্কী বিপ্লবী দীনেশ চন্দ্র গুপ্ত"।

"মুক্তির মন্দির সোপানতলে, কতো প্রাণ হলো বলিদান,,,,,,,"

গণতান্ত্রিক সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র হোলো আমাদের ভারতবর্ষ। কতো মানুষের আত্মত্যাগ, বলিদানের মধ্যে দিয়ে আজকে আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হয়েছি। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ভারতমাতা কে মুক্ত করতে কতো বিপ্লবী বীরেরা স্বাধীনতা আন্দোলনে মৃত্যু বরণ করে শহীদ হয়েছিলেন। তেমনি এক স্বনাম ধন্য বীর শহীদ হলেন "তুর্কি বিপ্লবী শ্রী দীনেশ চন্দ্র গুপ্ত ওরফে দীনেশ"। এঁর নামের সাথে আরো দুটি নাম যুক্ত না করলে পরিচিতি অসম্পূর্ণ থেকে যায় ,তাঁরা হলেন শ্রী বিনয় বসু,ও শ্রী বাদল গুপ্ত।
এক সারিতে এনারা ভারত বর্ষের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন,,, বিপ্লবী বিনয়_বাদল _দীনেশ ।।
বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার যশ লঙ এ ১৯১১ সালের ৬ ই ডিসেম্বর দীনেশ চন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শ্রী সতীশচন্দ্র গুপ্ত মা শ্রীমতী বিনোদিনী দেবী। বাবা ছিলেন পেশায় ডাক বিভাগের কর্মচারী। ছোটো বেলা থেকেই তিনি দুরন্ত ও নির্ভীক প্রকৃতির ছেলে ছিলেন। সেই সময় ছিলো পরাধীন,অখন্ড ভারত। স্কুল জীবন থেকেই তার মধ্যে স্বদেশীকতা বোধ ও ব্রিটিশ বিরোধীতার আদর্শ তৈরি হয়েছিল। কিশোর বয়সেই তিনি শ্রী সুভাষ চন্দ্র বসুর গঠিত "বেঙ্গল ভলান টিয়ার্স"নামে এক গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হন। ১৯২৬ সালে ঢাকা থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি মেদিনীপুরে বড় দাদা যোতীশ চন্দ্রের কাছে চলে আসেন । এখান থেকেই বিপ্লবী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হয়ে কাজ করতে থাকেন। এই সংগঠন থেকেই স্বৈরাচারী ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার দের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা হত্যা করেছিল__ডগলাস, বার্জ,ও পেডি ,,এই তিন জন কুখ্যাত ম্যাজিস্ট্রেট কে।অত্যাচারী শাসক ইংরেজ দের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।।
যে বয়সে তরুণ প্রজন্ম জীবনেরস্বপ্ন দেখা শুরু করে,__ সেই সময় দেশের এই তরুণ বিপ্লবীরা স্বপ্ন দেখেছিল,, দেশ মাতাকে পরাধীনতার দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে,। দেশকে স্বাধীন করার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে এতো টুকু ভয় পায় নি।ওই সময় জেল ইন্সপেক্টর এন,এস,সিম্পসন জেল বন্দী স্বদেশী দের ওপর অমানবিক নির্যাতন ও অকথ্য অত্যাচার করার জন্য কুখ্যাত ছিলেন। বন্দীদের চোখে ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন। এই দীনেশ গুপ্তের নেতৃত্বে সিম্পসন কে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। স্থির করা হলো,,, কলকাতার ডাল হাউসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসন কার্যালয় আক্রমণ করা হবে এবং অত্যাচারী সিম্পসন কে হত্যা করা হবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯১৩ সালের ৮ই ডিসেম্বর দীনেশ তার দুই সঙ্গী বিনয় ও বাদল সহ ইউরোপীয় পোশাকে ওই ভবনে প্রবেশ করে এবং সিম্পসন কে হত্যা করে। বিপ্লবীদের সাথে পুলিশের গুলি বিনিময় চলতে থাকে। ব্রিটিশ পুলিশদের মিলিত গুলিতে বিপ্লবী তিন জন সহজেই পরাস্ত হয়। কিন্তু তারা পরাজিত হয় ধরা দিতে চায়নি অত্যাচারী শাসক দের হাতে। বাদল ঘটনা স্থলেই পটাশিয়াম সাইনাইড খেয়ে মৃত্যু বরণ করে। বিনয় ও দীনেশ নিজেদের পিস্তল নিজেদের মাথায় ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। বিনয় হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মারা যায়। কিন্তু মৃতপ্রায় দীনেশ কে অত্যাচারী পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাঁচাতে সক্ষম হোলো।
এই তিন তরুণের অকুত ভয় সংগ্রাম কে ঐতিহাসিক গণ "অলিন্দ যুদ্ধ" নাম দিয়েছেন।
জেল হাসপাতালে বন্দী রাখা হয়েছিল দীনেশকে। সেখানেই তার বিচার চলে। বিচারে,,, সরকার বিরোধী কাজ কর্ম ও সিম্পসন খুনেরজন্য তাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালের ৭ই জুলাই তার ফাঁসি হয়। তখন তার বয়স মাত্র ১৯বছর। পরাধীন ভারত কে স্বাধীন করতে,,, তাজা ,তরুণ প্রাণ গুলি ,এইভাবে অকালে ঝরে গিয়েছিল ।
মৃত্যুর আগে জেলে বসে দীনেশ চন্দ্র কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিগুলো ভারতের বিপ্লবের ইতিহাসে গুরুত্ব পূর্ণ দলিল এবং সাহিত্যের বিচারে অত্যন্ত মূল্যবান বলে পরিগণিত হয়ে আছে।
স্বাধীনতা লাভের পর দীনেশ চন্দ্র সহ অপর দুই বিপ্লবী দের সন্মানার্থে ,ও চির স্মরণীয় করে রাখতে , কলকাতার প্রসিদ্ধ ডালহাউ সি স্কয়ারের নাম ,,,বিনয়_বাদল_দীনেশ বাগ রাখা হয়। যা এখন সংক্ষেপে বি বা দী বাগ বলে পরিচিত হয়ে আছে।।
বর্তমান স্বাধীন ভারতে স্বাধীনতা দিবস আমরা পালন করি। অনেক বিপ্লবীদের স্মরণ করি। তাঁদের সাথে এদেরও ভুললে চলবে না।স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃৎ মহান বিপ্লবীদের আদর্শে যেনো আমরা অনুপ্রাণিত হই এবং পর প্রজন্মকে যেনো এই ভাবে দেশসহ দেশের প্রতি মানুষকে। ভালোবাসতে শেখাতে পারি। দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে পারি। দেশের প্রতিটি মানুষের মণিকোঠায়, যুগে যুগে এরা প্রদীপের শিখার মতো জাজ্বল্যমান হয়েই রয়ে যাবেন।।
তরুণ তুর্কী বীর দীনেশ চন্দ্র কে প্রতি ভারত বাসীর পক্ষ থেকে প্রণাম জানাই।

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com