Logo
logo

সাহিত্য / কবিতা

প্রবন্ধ - কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা এবং রাজকুমারী গুপ্তা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন - আরম্ভের পূর্বেও আরম্ভ আছে। সন্ধ্যা বেলায় দীপ জ্বালানোর আগে সকাল বেলায় সলতে পাকানো।

তাই রাজকুমারী গুপ্তা সম্পর্কে বলতে গেলে কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে কিছু বলা আবশ্যক।

 
চৌরিচৌরার হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হয়ে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলে ভারতের স্বাধীনতা প্রেমী মানুষ আশাহত হলেন। সুভাষচন্দ্র বসু এই সিদ্ধান্তকে “Himalayan Blunder” বলে অভিহিত করলেন।
শুধুমাত্র অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা আসবে না এই বিশ্বাস জন্মালো মানুষের মনে। এজন্য প্রয়োজন সশস্ত্র বিপ্লব। সেজন্য বাংলার অনুশীলন সমিতির মতো বাংলার বাইরেও গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে ওঠে। এই সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন। চন্দ্রশেখর আজাদ, রামপ্রসাদ বিসমিল, ভগৎ সিং, আসফাকউল্লা খান, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল প্রভৃতি এই বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য ছিলেন। অনুশীলন সমিতি, হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট ইত্যাদি সংগঠন গুলির মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ছিল। সশস্ত্র বিপ্লব পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিল অস্ত্র, বোমা বারুদের। আর এজন্য প্রয়োজন ছিল টাকার।
1925 সালে সোস্যালিস্ট দলের তরফে ‘রিভলিউশনারি’ নামে ইস্তাহার প্রকাশ করা হয়। সেই ইস্তাহারে বৃটিশ শাসনের উৎখাত, সবার সমান অধিকার, সকলের ভোটাধিকার প্রভৃতির কথা বলা হয়। দলের তহবিল সংগ্রহের জন্য তাঁরা বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। তারমধ্যে কাকোরি ট্রেন ডাকাতি অন্যতম। 1925 সালে 9ই আগস্ট এই ডাকতি সংগঠিত হয়।
    বৃটিশ সরকার প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ভারতবর্ষকে লুঠ করছে। তাই তাদের কোষাগারও লুঠ করতে হবে। তাই 8 আগস্ট 1925 সালে শাহজাহানপুরের সভায় স্থির হয় পরদিন সরণপুর লক্ষ্ণৌর 8 ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনে যে সরকারি সম্পদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা লুঠ করা হবে। সেই মত বিসমিল্লার নেতৃত্বে চন্দ্রশেখর আজাদ, আসফাকউল্লা সহ আটজন ট্রেন লুঠ করেন। একজন যাত্রীকে অনিচ্ছাকৃত হত্যা করা হয়। ফলে কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলার সাথে খুনের মামলাও যুক্ত হয়। মামলার চুড়ান্ত রায়ে রামপ্রসাদ বিসমিল, রাজেন্দ্র লাহিড়ী, ঠাকুর রৌশন সিং, আসফাকউল্লা খানের ফাঁসি হয়। শচীন্দ্রনাথ সান্যালের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়। বাকিদের কম করে পাঁচ থেকে দশ বছরের সাজা হয়।
রাজকুমারী গুপ্তা
“আমি নারী বলে আমাকে ভয় কর না? বিদ্যুৎশিখার হাত দিয়ে ইন্দ্র তাঁর বজ্র পাঠিয়ে দেন৷” (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কাকোরি ষড়যন্ত্রের সাথে যিনি ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত ছিলেন, অথচ  যাঁর নাম এই বিপ্লব সংগঠিত হবার অনেক পরে জানা যায় তিনি রাজকুমারী গুপ্তা। কাকোরি কান্ডে যুক্ত সংগ্রামীদের নামের সাথে তাঁর নামের উল্লেখ পর্যন্ত নেই!
রাজকুমারী গুপ্তা 1902 সালে কানপুরের বান্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার মুদির দোকান ছিল।   তেরো বছর বয়সে মদনমোহন গুপ্তার সাথে তাঁর বিবাহ হয়।
 তাঁর স্বামী মদনমোহনের, গান্ধীজি এবং চন্দ্রশেখর আজাদ দুজনের সাথেই যোগাযোগ ছিল। স্বামীর সাথে থেকে তাঁরও গান্ধীজির অহিংস আন্দোলন এবং আজাদের চরমপন্থী আন্দোলনে সাথে পরিচয় ঘটে। তিনি এবং তাঁর স্বামী দুজনেই গান্ধীজির অহিংস আন্দোলনে অংশ নেন।
একদিকে যেমন অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হয়, তেমনি  ইংরেজদের দমন পীড়নও বেড়ে যায়। তখন অনেকের মত রাজকুমারীরও মনে হয় অহিংস পথে দেশের স্বাধীনতা আসবে না। দেশের স্বাধীনতা আনতে গেলে চরম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। সেই সময় তিনি আজাদের হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাকলিকান এসোসিয়েশনের সদস্য হন এবং সক্রিয় ভাবে কাজ করতে থাকেন।
তিনি কাকোরি কান্ডে যুক্ত বিপ্লবীদের মধ্যে অস্ত্র আদান প্রদান এবং সংবাদ বাহকের কাজ করতেন। তিনি এই সকল অস্ত্র নিজের অন্তর্বাসে লুকিয়ে সরবরাহ করতেন। তিনি খাদি কাপড় পরতেন এবং সেই কাপড়ের সাহায্যে অস্ত্র আড়াল করে রাখতেন। একদিন মাঠের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। এই সময় সাথে তাঁর তিন বছরের ছেলেও ছিল। Women in the Indian National Movement Unseen Faces and Unheard Voices 1930-42 এ সুরুচি থাপার এর লেখা থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।
কিন্তু তিনি যে এই বিপ্লবী সংগঠনের সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন তা তাঁর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানতেন না। তিনি সম্পূর্ণ গোপনে এই কাজ করতেন। ফলে তিনি যখন ধরা পড়েন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে ত্যাগ করেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সংবাদপত্র বীর ভগৎ এ তাঁরা দাবী করেন, রাজকুমারী গুপ্তা সাথে তাঁদের কোন সম্বন্ধ নেই। ফলে রাজকুমারী গুপ্তাকে পারিবারিক  প্রত্যাখ্যানেরও মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু তিনি স্বাধীনতার লড়াই থেকে পিছিয়ে আসেন নি। 1930, 1932 এবং 1942 সালে ওনাকে জেলে যেতে হয়। শুধু তাই নয় এরপর বাকী জীবন তিনি একাই কাটান।
   ফ্লিমমেকার এবং লেখিকা সাগরি ছাবরাকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের সম্পর্কে  যা বলেন তা  হল..... আমাদের যা করার ছিল আমরা তাই করেছি। আমরা উপর থেকে গান্ধীবাদী, কিন্তু ভিতরে ভিতরে বিপ্লবী। “हम ऊपर से गांधीवादी थे और नीचे से क्रांतिबादी”।

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com