Logo
logo

গল্প / কাহিনী

নববর্ষের সাতকাহন

'প্রভাত সূর্য এসেছে রুদ্র সাজে,
দুঃখের পথে তোমার তূর্য বাজে ”

তূর্য বাজিয়ে প্রকৃতি রাঙিয়ে ঝড়ের বেগে আসে বৈশাখ। পুরানো দিনের গ্লানি জরাকে মুছে দিয়ে এক রাশ হাসি, আনন্দ আর গান দিয়ে ভুলিয়ে দিয়ে যায় নববর্ষ। নতুনের পশরা সাজিয়ে আগমন ঘটে নতুন বছরের। বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির প্রাণে এবং দেশের সর্বত্রই তৈরি করে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। পৃথিবীর সব দেশের মানুষ নিজের নিজের মতো করে নববর্ষের উৎসব পালন করে থাকেন। সেদিন সকাল থেকে বাঙালির মন গেয়ে ওঠে – “নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণে” – এই দিনটি নানা রকম আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয় যেমন বৈশাখী মেলা,মঙ্গল শোভাযাত্রা ও হালখাতা।

পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪ই / ১৫ই এপ্রিল অথবা বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখ মাসের পয়লা তারিখে এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা সালের প্রবর্তন করেন মোগল সম্রাট আকবর এবং তার শাসনকালে প্রথম পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়। বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটি পয়লা বৈশাখ,মহা ধুমধামে শুরু হয় বর্ষবরণ। বাংলার গ্রামীণ এবং নাগরিক জীবনের মেলবন্ধন সাধিত হয়ে সকলে এক সূত্রে বাঁধা পড়েন নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দে। সবাই গেয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের এই গান
‘এসো হে বৈশা্‌খ, এসো এসো।
তাপসনিশ্বাসবায়ে, মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।'

বাংলা নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ হল বৈশাখী মেলা। এটি একটি সর্বজনীন উৎসব। এ মেলায় আবহমান গ্রামবাংলার সাংস্ক্তিক কর্মকাণ্ডের একটি পরিচিতি ফুটে ওঠে। বৈশাখী মেলা ছাড়াও বাংলা নববর্ষের আরেকটি আকর্ষণ হালখাতা।

সারা চৈত্র মাস জুড়েই চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশই এদিন থেকে ব্যবসায়িক হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করেন, যার পোশাকি নাম হালখাতা। এ উপলক্ষ্যে তাঁরা নতুন- পুরনো খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি খাওয়ান।

বাংলা নববর্ষ বাঙালির জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। এ দিন পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত। পারিবারিক ভাবে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। এই দিন পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিটি পরিবার চেষ্টা করেন নতুন বস্ত্র পরিধান করতে। এই দিনটিতে বাঙালিরা প্রত্যেকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। বড়দের কে প্রণাম আর ছোটদের কে ভালবাসা জানানো হয়। এই দিনটি খুব শুভ দিন বলে বাঙালিরা মনে করেন। সব কিছু তে আনন্দের ছোঁয়া লাগে। নববর্ষ আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগায়। তাই বাঙালিদের জীবনে নববর্ষের প্রভাব গভীর ও ব্যাপক।

নববর্ষ প্রতি বছর বাঙালিদের একটি নতুন বছরের উপহার দেয়। পেছনে ফেলে আসা গোটা একটি বছরের নানান ওঠাপরা,দুঃখ ,বিবাদ, আনন্দ, সুখ আর আকাঙ্খাকে পুরনের স্মৃতি করে, নতুন একটি বছরকে বরণ করে নেওয়ার সময়। আবার নতুন করে পথ চলা । না পাওয়া গুলোকে পাওয়ার চেষ্টায়ে আবার পথ হাঁটা। সব বিভেদ ভুলে গিয়ে এক অপরের মিলে মিশে বাঁচা। সকলের মঙ্গল এবং উন্নতি কামনা করে, বাঙালিরা এই দিনটি পালন করে থাকেন। তাই নববর্ষের মাহাত্ম্য প্রত্যেক বাঙালিদের জীবনে অনস্বীকার্য।

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com