Logo
logo

গল্প / কাহিনী

নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধি  (ভৌতিক গল্প)

ঔরংজেবের পরবর্তী শাসকদের মধ্যে মুর্শিদকুলি খাঁ ছিলেন একজন  শক্তিশালী শাসক। বাংলা বিহার ওড়িশার নবাব। নামমাত্র  মুঘল অধীন এ থেকে  স্বাধীন ভাবে  শাসন করেছেন বাংলা বিহার ওড়িশা।তাঁর নামানুসারেই মুর্শিদাবাদ নাম। তোমরা ভাবছ এ কিরে বাবা!  গল্প  শুনতে বসে ইতিহাসের কচকচি । না গো তা নয়! এ হলো  গিয়ে রবি  ঠাকুরের ভাষায় প্রদীপ জ্বালানোর  আগে  সলতে  পাকানো।
গরম বেশ পড়েছে।এপ্রিলের মাঝামাঝি। ঠিক হল মুর্শিদাবাদ ঘুরতে যাব।সেই মতো রওনা হলাম ।কিন্তু ভুল দিনে এসে পড়েছি। আজ যে জুম্মাবার!মতিঝিল হাজার দুয়ারি সব বন্ধ। হোটেল থেকে বলল, কাটরা মসজিদ জগত শেঠের বাড়ি  দেখে আসুন। সত্যি তো! বেড়াতে এসে কি হোটেলে বসে থাকতে ভাল লাগে!
সেই মতো কাটরা মসজিদ দেখতে  চলে এলাম । কি সুন্দর  সাজানো  বাগান ! গেট দিয়ে ঢুকতে না ঢুকতেই একজন এসে বললেন,আমরা বেকার ছেলে। এখানে গাইডের কাজ করি ।আপনাদের যদি লাগে .... তো নিলাম গাইড। উনি একজনকে ঠিক করে দিলেন । আমাদের সাথে এসে জুটল একদল কলেজ  পড়ুয়া ছাত্র ।
গাইড বলতে শুরু করেন, কাটরা শব্দের অর্থ বাজার---- গাইড এর সাথে সাথে  আমরা ও হাঁটছি। তিনি এক একটা জায়গা দেখাচ্ছন আর বলছেন- এখানে কত লোক সমাগম হত,এখানে ছাত্ররা পড়াশোনা করত,এই বিশাল চত্বরে বহু মানুষ একসাথে নামাজ পড়তেন। বহু পুন্যাত্মার পায়ের ধূলি পড়েছে এখানে ।
আমরা  গাইডের কথা শুনছি । কিন্তু ছেলে ছোকরার দল সেলফি তুলতে ব্যস্ত । এদিকে  ঠা ঠা রোদ। টুরিস্ট বেশ কম।
গাইড বলছেন, এই যে সিঁড়ি নেমে গেছে নিচের দিকে এর নীচেই নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ র সমাধি।আমরা দাঁড়িয়ে আছি সমাধির ঠিক  উপর । গাইড এর কথায়  অস্বস্তি বোধ করতে  লাগলাম। নবাবের সমাধির উপর  আমরা দাঁড়িয়ে! ছেলেদের দল ও এগিয়ে  এসেছে গাইড এর কথায়।
গাইড বলছেন, নবাব  মুর্শিদকুলি  যিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত সম্রাট ঔরংজেবকে অর্থ  সাহায্য করেন, যাঁর নামানুসারে মুর্শিদাবাদ তিনি প্রথম জীবনে খুব  অত্যাচারী ছিলেন। বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেন ও বহু হিন্দুদের হত্যা  করেন। অথচ  তিনি নিজেই দাক্ষিনাত্যের হিন্দু ব্রাহ্মন পরিবারের সন্তান (এটা একটা  মত, অন্য মত ও আছে)। শেষ জীবনে তিনি  অনুশোচনা করেন। তাই তিনি চান , এমন ভাবে তাঁর সমাধি নির্মিত হবে  যাতে বহু মানুষের পদধূলি সেখানে  পড়ে। এতে তাঁর পাপমোচন হবে।
এসব কথায় হঠাৎই ছেলেদের দল উত্তেজিত হয়ে উঠল। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেই ভূমিতে তারা লাথি ঠুকতে লাগল , অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল । এরপর আবার  নিজেদের মধ্যে সেলফি তুলতে শুরু করল। কেমন যেন অদ্ভুত অবজ্ঞা মিশ্রিত  সে আচরণ !
কাজটা তোমরা ভালো  করলে না, গাইড  গম্ভীরভাবে বললেন । আমার ও ভাল লাগল না ব্যাপারটা। ছেলেরা তখনও হো হো করে হাসছে। হঠাৎ একটি ছেলে বলে উঠল, দেখ দেখ আমাদের সেলফিগুলো কেমন মাঝখান থেকে কেটে গেছে।উপর নীচ আধাআধি ভাগ হয়ে গেছে । সবাই  নিজের নিজের মোবাইল  ক্যামেরায়  আবার ফটো সেলফি তুলতে শুরু করল । কিন্তু একই ঘটনা ঘটতে থাকল।
গাইড  বললেন, শতকের পর শতক ধরে নবাব নিজ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে যাচ্ছেন এই সমাধি শয্যায়। আর সেই  সমাধির উপর তোমরা  লাথি মারলে! গাইডের গলার এই অপার্থিব  স্বর আমরা  চিনি না। অতীতের কোনো অতৃপ্ত অশরীরী কি ভর করেছে তাঁর উপর? আমাদের বললেন, সম্ভব হলে নবাবের সমাধিতে মাফ চেয়ে নিন।
এখন ছেলের দল বেশ ঘাবড়ে গেছে।বাইরে গুমোট গরম। ঈশান কোনে এক দলা কালো মেঘ কুণ্ডলী পাকাচ্ছে!
নীচে নেমে  এলাম। আলো আধাঁরিতে ঘেরা সমাধি  ভূমি। ছেলেদের বললাম, এসো ক্ষমা চেয়ে নি! নতজানু হলাম সমাধির সামনে। আবার সেই অপার্থিব কন্ঠস্বর ভেসে এলো, "আমার সমাধিতে পদচারণা করার অনুমতি আমি দিয়েছি পদাঘাতের নয়"!
চমকে উঠলাম! চোখ গেল সমাধির দিকে। সমাধির উপর রক্ত চক্ষে সাদা আলখাল্লা পরিহিত কে উনি? উনিই কি বাংলার প্রথম নবাব  মুর্শিদকুলি খাঁ?
বিহ্বল হয়ে গেছিলাম। বিহ্বলতা কাটল গাইডের ডাকে। বাইরে তখন বৃষ্টি নেমেছে।
সব চরিত্র কাল্পনিক।

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com