Logo
logo

সাহিত্য / কবিতা

আমাদের জীবনাবর্তে বর্ষা

বর্ষা ও বাঙ্গালী- এই শব্দ দুটো একে অপরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে।যুগে যুগে কবি ও কাব্যে এর বর্ণনার ছটা আমাদের বাংলা সাহিত্যকে আলোকিত করে তুলেছে।"হরষে ও বিষাদে "- এই দুই রূপেই বর্ষা আমাদের জীবনকে একই সূত্রে গেঁথে রেখেছে। এদের বিচ্ছিন্ন করার উপায় নাই,নাই,নাই।
"দহনশয়নে তপ্ত ধরণী পরেছিল পিপাসার্তা,
পাঠালে তাহারে ইন্দ্রলোকের অমৃতবারির বার্তা।"
প্রচণ্ড দাবদাহে গরম বাতাস আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে।রুক্ষ প্রকৃতিতে বসুন্ধরা ফুটিফাটা প্রাণী কুলের সাথে! "চাতক বাড়ি যাচেরে"? ঠিক সেই সময় বর্ষা নিয়ে আসে অমৃতবারির বার্তা। বারি ধারায় সিক্ত পৃথিবীর অন্তঃস্থল থেকে মিষ্টি মধুর নির্যাস।কদম,কামিনীর সুবাসে চারিদিক আমোদিত করে তোলে। "আয় সবে বৃষ্টিতে ভিজি" - চারিদিক শিশু,যৌবন,এমন কি বার্ধক্যের আনন্দ কোলাহলে ভরে ওঠে। আনন্দে বর্ষার গানে,"হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে"। জানালার কাঁচে বৃষ্টিধারা মনকে আনমনা করে তোলে। কোন সুদূরের প্রিয়জনের কথা ভাবনায় ছায়া ফেলে। অতীত সাগরে ডুব দিতে মন যে চায় ।ক্ষণিকের তরে, বৃষ্টির জলের স্পর্শে,এক অজানা ছোয়ায় মন শিহরিত হয়। নব পল্লব বারি ধারায় সিক্ত হয়ে ওঠে।
ভুবনে সবুজ বনানীতে আনন্দ ধারা বয়ে চলে। নতুন ধানের চারা মাথা দুলিয়ে ভিজতে থাকে,তৃষ্ণার্ত প্রাণিকুল তৃষ্ণা মেটায়। বর্ষার জলধারায় শীর্ণকায় নদী তার যৌবন ফিরে পেয়ে দুকুল প্লাবিত করে। আগত বর্ষায় প্রকৃতির সাথে আমরাও আনন্দে মেতে উঠি। গুরুদেব রচিত "বর্ষামঙ্গল" দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। নব যৌবন বর্ষার সাথে আমরাও অনাবিল আনন্দে মেতে উঠি।রুক্ষ ক্ষেত বর্ষার জলে ভিজে ওঠে।চাষী ভাইরা চাষ করে আনন্দে। নতুন ফসলের সবুজ চারায় বসুন্ধরা সবুজে রেঙে ওঠে। সে এক নয়নাভিরাম,অপূর্ব দৃশ্য।
শুধু কি তাই!"ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে,ইলিশ মাছের ডিম" - এ এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। আমাদের রান্নাঘরে রান্নার সুবাসে প্রাণ ভরিয়ে দেয়। বাঙ্গালীর প্রিয় "ইলিশ মাছ" - নানা পদে আহারে,,বাহারে পরিবেশিত হয়। তারই মাঝে চালে ডালে খিচুড়ি আমাদের রসনার পরিতৃপ্তি ঘটায়।সাথে পাঁপড় বা ডিম ভাজা। একেবারে রাজযোটক। এর পরে বাদলা দিনে ঘরে বসে বর্ষার গান অথবা ভূতের গল্প পাঠ,ওহ! বর্ষার সঙ্গে আসর জমবে রসে রঙ্গে।
আবার প্রকৃতির নিয়মানুসারে,দুঃখ না পেলে, সুখের চেহারা যেমন অনুধাবন করা যায় না, তেমনি বর্ষার ভয়ংকরী রূপ না থাকলে তার কল্যাণময়ী রূপের হদিস মিলতো কি? তাই আনন্দের পাশাপাশি বর্ষার বিষাদের রূপ ও প্রকৃতিতেও আমাদের জীবনে ধরা পরে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে নদীর জল বেড়ে ওঠে,বন্যা দেখা দেয়। চারিদিক বন্যার জলে ভেসে যায়। প্রাণীকুলের সাথে সাথে আমাদের জীবনও ধ্বংসের কোপে পরে। চারিদিক এর হাহাকার,আর্ত মানুষের চিৎকার, অসহায় প্রাণী কুল ভেসে যায়,আমাদের জীবনকে বিষাদের চাদরে মুড়ে দেয়।বন্যার জলে ক্ষেত খামার সব ডুবে যায়।খাদ্যের ভান্ডারে টান পড়ে। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কত মানুষ,জীব জন্তু মারা যায়।প্রকৃতির কোপে মানুষ অসহায় হয়ে পরে ।অসহনীয় এক যন্ত্রণায় আমরা বিদ্ধ হতে থাকি।
এরপর জল সরে গেলেও এর প্রকোপে কলেরা,টাইফয়েড ইত্যাদি নানান রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। প্রাণ হানিও হয়। বিষাদের আস্তরণে প্রকৃতি ঢেকে যায়।
এসব সত্ত্বেও আমাদের মেনে নিতেই হয় জীবনের চরম সত্য।অমোঘ বাণী, "দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?"দিন না এলে যেমন রাতের সৌন্দর্য্য বোঝা যায় না, তেমনি বিষাদ না থাকলে হর্ষের এতো মাদকতা জীবনে আমরা পেতাম কি ? রবি কবির "বর্ষা মঙ্গল" সহ গীতাঞ্জলীর জীবন দায়ী অমর কবিতা সমগ্র রস থেকে আমরা বঞ্চিত হতাম হয়তো!
তাই আমাদের জীবনের অনুভবে,হরষে ও বিষাদে - এই দুটো রূপেই বর্ষা ছিল,আছে এবং থাকবেও।
তাই তো বলি,
"আসুক দুঃখ,থাকুক কষ্ট!
তবুও আনন্দ আসবে জানি।
ঋতুচক্রের ভারসাম্যে,
সবই হবে ঠিক, তা মানি।"

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com