হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ
ঘরে --বাইরে বাঙালির অন্তরে যে ঈশ্বর রক্ত মজ্জায় মিশে আছেন, তিনি আমাদের সকলের প্রাণের ঠাকুর রবিঠাকুর। ছোটবেলা থেকে দেখে আসা জোব্বা পোষাকে ফ্রেম বন্দি হয়ে পুষ্প চন্দনে সুসজ্জিত তিনি আমাদের আশ্রয় দাতা বিশ্ব বরেণ্য রবীন্দ্রনাথ।
প্রকৃতির সাথে মানুষের চিরকালের আত্মিক সম্পর্ক। প্রকৃতি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য রবীন্দ্রনাথ গভীর ভাবে ভাবতেন। নৌকায় করে ভ্রমন কালে তিনি চারপাশের প্রকৃতিকে নানা ভাবে উপলব্ধি করতেন। ভোর পাখির কলতান, ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক , তারায় ভরা উন্মুক্ত আকাশ সংসারের নানা সুখ-দুঃখ যা আমরা তাঁর লেখা কবিতা ,গান,নাটক,ছোটগল্প ও উপন্যাসের মধ্য দিয়ে দেখতে পাই।
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন প্রকৃত শিক্ষা কখনও চারদেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে পারেনা ।
প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। তাই তিনি শান্তিনিকেতনে খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। শিশুরা খাঁচায় বন্দি না থেকে উন্মুক্ত পরিবেশে স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়াবে তবেই তো প্রকৃতির অপরূপ ঋতু বৈচিত্রকে উপলব্ধি করতে পারবে। তিনি গ্রামীণ,কৃষি, হস্তশিল্প, কারিগরি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে তা বাস্তবায়িত
করেছিলেন। প্রকৃতির সাথে বিশ্বকবির নিবিড় সংযোগ ছিল। প্রকৃতির সৌন্দর্য কবিকে নানা ভাবে আকৃষ্ট করত। তাই তো তিনি মরুভূমিতে সবুজের আহ্বান জানিয়েছিলেন--
" মরু বিজয়ের কেতন ওড়াও হে শূন্যে "
যা তার লেখা গানের মধ্যে চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে ।
প্রতিটা ঋতুকে তিনি নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করেছেন --- গ্রীষ্মের খরতাপে কুরচির সুবাস , গাছের নিচে পড়ে থাকা তাল কুড়ানো , বর্ষায় ফুঁসে ওঠা নদীর রুদ্ররূপ , শরতের কাশফুল, হেমন্তের ধান ওঠা, কাল বৈশাখী ঝড়ে প্রকৃতির সাথে নিজেকে সামলে রাখার অভ্যাস করা নানা কর্মের মধ্যে তিনি প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। নামহীন বৃক্ষলতাকে তিনি মানুষের মাঝে পরিচিত করেছেন নতুন নতুন রূপে। বন্ধু পিয়ারসনের দেওয়া বিদেশী চারা গাছ নিজের বাসগৃহের সামনে রোপণ করে ছিলেন। এক সময় গাছটি সুন্দর নীল ফুলে ভরে ওঠে। নামহীন এই ফুলটির নাম দিয়ে ছিলেন "নীলমণী লতা"। একই ভাবে ফুলের রূপে মুগ্ধ হয়ে নাম দিয়েছিলেন "মধুমঞ্জরি "। অনাদরে বেড়ে ওঠা কুরচি ফুল রোপণ করে সমাদরে পৌঁছে দিয়েছিলেন লোকালয়ে ।
ঋতু নির্ভর উৎসবের মধ্য দিয়ে তিনি কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থাকে সম্মানিত করেছিলেন । পরিবেশ চিন্তার অন্যতম নিদর্শন হিসাবে বৃক্ষ রোপণ, হলকর্ষণ , নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, বর্ষার আগমনে বর্ষামঙ্গল ও শীতে পৌষ মেলার আয়োজন করেন । কীর্তন, বাউল, লোকসঙ্গীত, যা ব্যবহারিক জীবনে গ্রামোন্নতির উজ্জ্বল নিদর্শন । রবীন্দ্রনাথ তাঁর মনন ও চিন্তাসূত্রকে বিস্তৃত করে তাঁর সৃষ্টিশীলতার ভেতর দিয়ে চারপাশের জগৎকে বুঝতে চেয়েছিলেন ।তাইতো তিনি তাঁর লেখনী ও কর্মের মধ্য দিয়ে সকলের হৃদয়ে জুড়ে আছেন । তাঁর লেখা বিশ্ব পরিবেশ সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে কবিগুরুকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা -------
" আকাশ ভরা সূর্য-তারা বিশ্ব ভরা প্রাণ
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান ,
বিষ্ময়ে তাই জাগে আমার গান " ||