অণুগল্প - এই রকমও প্রেম হয়
সেইদিন পিঙ্কি দির সাথে কথা হচ্ছিলো। পিঙ্কি দির সাথে কথা বলতে খুব ভাল লাগে, পিঙ্কি দিও বলেন আমার সাথে কথা বলতে নাকি খুব ভাল লাগে। অবশ্য দুইজনের মনের মিল আছে বলেই বন্ধুত্ব এত গাঢ় হয়েছে, বন্ধুত্বে মনের মিল থাকা খুব দরকার। আমাদের পাড়াতে পিঙ্কি দি এই একবছর হল এসেছেন। সারাক্ষন দেখতাম সংসার নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতেন খুঁটিনাটি সব বিষয়ে খুব নজর ছিল আমার বেশ লাগত সেটা এখন কেরিয়ার নিয়ে সবাই এত দৌড় দেয় আমি ও খুব কেরিয়ার নিয়ে পাগল কিন্তু পিঙ্কি দি সংসারটা কী সুন্দর করছে। ওনার বর অফিসের কাজ নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত তাই পুরোটাই পিঙ্কি দি কেই দেখতে হয় কিন্তু উইকেন্ডে ওরা ঘুরতে যায় খুব হ্যাপী কাপ্যল। একদিন বিকেলে রেওয়াজ করে উঠে দেখি ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে অত্যধিক গরমে যখন এই বৃষ্টি এল যেন প্রাণ ফিরে পেল আমি ব্যালকেনিতে এসে দাঁড়াই তখন দেখি পিঙ্কি দিও ব্যালকেনিতে দাঁড়িয়ে। মুখোমুখি হওয়াতে, বললাম "বৃষ্টি উপভোগ করছো সত্যিই এই গরমে খুব শান্তি হল"। পিঙ্কি দি একটু হেসে বলল "বৃষ্টি তো উপভোগ করছিই কিন্তু তার সাথে তোমার গান ও শুনছি। সারাদিন কাজের পর যখন বিকেলে কফি নিয়ে বসি আর তোমার গান শুনি মনটা জুড়িয়ে যায় কী ভাল গান করো তুমি প্রত্যেকদিন তোমার গান শোনার জন্যই এই ব্যালকনিতে আসা"। আমি অবাক হলাম আমার গান শোনার জন্য কেউ অপেক্ষা করেন আবার সেটা কী সুন্দর করে বললেন আজকের যুগে কেউ এইরকম ভাবে কারোর প্রশংসা করে। তারপর যতো মিশলাম পিঙ্কি দির সাথে আরোও শ্রদ্ধা ভালোবাসা বেড়ে গেল। পিঙ্কি দিও আমাকে খুব ভালোবাসেন। আমার পছন্দের কোনো খাবার হলেই আমার জন্য পাঠিয়ে দেন আবার আমার মাও পিঙ্কি দির বা পিঙ্কি দির বরের পছন্দের কোনো খাবার হলেই পাঠান একটা আত্মার সম্পর্ক হয়ে গেছে ওনাদের সঙ্গে।
কিছুদিন পর শুনি পিঙ্কি দি যোগা ক্লাসে ভর্তি হয়েছে শারীরিক কিছু সমস্যার জন্য সেই শুনে আমি ও ভাবলাম আমি ও ভর্তি হয় দিনদিন কেমন মোটা হয়ে যাচ্ছি, জিমে যাওয়ার থেকে যোগা ভর্তি হওয়া ভাল। আমি আর পিঙ্কি দি প্রত্যেকদিন একসাথে যোগা ক্লাসে যাই আর আসি সেইজন্য আমাদের বন্ধুত্ব আরোও গাঢ় হয়েছে। একদিন যোগা থেকে বেড়িয়ে দেখি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। সকাল থেকেই ভালো বৃষ্টি ছিল বিকেলে বন্ধ হওয়ায় আমরা যোগা ক্লাসে যাই। বর্ষাকাল ভাবাই উচিত ছিল এই বৃষ্টি থামলেও আবার হবে আসলে দুইজনেই এই সময়টা অপেক্ষা করতাম কখন দেখা হবে আমাদের। যখন দেখি বৃষ্টি থামছেই না পাশে একটা ক্যাফে তে গিয়ে বসি এই ক্যাফে তে যাওয়ার ইচ্ছা আমাদের দুইজনের খুব ছিল, ক্যাফেতে যাওয়ার ইচ্ছার থেকে দুইজনে আড্ডা মারবো এটাই আসল কথা ছিল। নানারকম কথাবার্তার পর পিঙ্কি দির কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও বলেন। আমি একটা কথা ভাবছিলাম বলবো কিন্তু কিছু মনে করে বলে বলতেও পারছিলাম না কিন্তু পিঙ্কি দি আমার কাছে এতোটাই কাছের, না বলেও পারলাম না। আর পিঙ্কি দিও আমাকে বললেন, "তুই এই কয়েকদিনে আমার নিজের বোন হয়ে গেছিস রে আমার তো কোনো বোন নেই তুই আমার বোন তাই যা বলবি বল এতো জিজ্ঞেস করার কিছু নেই আমি কিছু মনে করবো না"। তখন আমি পিঙ্কি দি কে বলি তোমরা বেবী প্ল্যানিং করছো না? একটা বেবী হলে কিন্তু অনেক সমস্যা মিটে যায় শুনেছি। পিঙ্কি দি একটু হেসে বললেন, "তোকে তাহলে আমাদের জীবনের সব থেকে বড় সিক্রেট বলি সেটা আমাদের দুই বাড়ির মা বাবা ছাড়া আর কেউ জানেন না। আমি কখনোই মা হতে পারবো না রে ভগবান তোর দাদাকে এটা থেকে বঞ্চিত করেছেন। আমি ও এই বিষয় নিয়ে কিছু বলি না রে তোর দাদা কষ্ট পাবে নিজেকে অপরাধী ভাববে তার জন্য আমি মা হতে পারছি না আর দেখ আজ তো এই সমস্যা আমার ও হতে পারতো।"। কথাটা শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছিল পিঙ্কি দির জন্য, এত ভাল মানুষ ভগবান তার সাথেই এমন করলেন। পিঙ্কি দির বরের জন্য খারাপ লেগেছে কিন্তু পিঙ্কি দির জন্য যেন একটু বেশি খারাপ লেগেছিল। আসলে এতোটাই মনের ক্লোজ হয়ে গিয়েছিলাম ভালো খারাপ যা হয় দুইজনে দুইজনকেই শেয়ার করতাম এর থেকেও বড় কথা সামান্য কথা ফালতু কথা কোনো কথায় বাদ দিতাম না এখানে বোঝা যায় কতটা ক্লোজ ছিলাম আমরা। তারপর পিঙ্কি দি বললেন ওনাদের লাভ স্টোরি যদিও ওনাদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিল। সুব্রত দা মানে পিঙ্কি দির বর খুব ভাল একটা আইটি সেক্টরে কাজ করতেন। কিন্তু বিয়ে ঠিক হওয়ার পর নাকি সেই চাকরি চলে যায়। পিঙ্কি দির মা বাবা সেই বিয়ে তখন ক্যানসেল করে দেন, স্বাভাবিক ভাবেই মা বাবারা যা করেন ছেলে মেয়েদের মঙ্গলের জন্য কিন্তু পিঙ্কি দির জেদের কাছে বাধ্য হন শেষে বিয়ে দিতে আর কোনো মানুষের অনেক বড় মন না থাকলে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না ভাগ্যিস জেদ ধরেছিলেন আর এত বড় সিদ্ধান্ত পিঙ্কি দি নিয়েছিলেন তাই তো ওনারা এত সুখী আর দাদা এখন কত ভালো চাকরি করেন পিঙ্কি দির ধৈর্য্য ভগবান ও দেখেছেন। এই হল পিঙ্কি দি আর সুব্রত দার লাভ স্টোরি প্রথমে খারাপ লাগলেও পুরো শুনে পিঙ্কি দি আর দাদার প্রতি শ্রদ্ধা আরোও বেড়ে গেল কিন্তু এর পরবর্তী কথাটা যেন মন খুবই খারাপ হয়ে গেল। পিঙ্কি দি আর সুব্রত দার মায়েরা যেন কেমন অদ্ভুত যতবারই দেখছি কেমন যেন কথাবার্তা। সেই কথা পিঙ্কি দি কে বলি উনি বললেন, "তুই খুব লাকি রে এইরকম একজন বন্ধুর মত মা পেয়েছিস আমরা বন্ধুর মত না হোক মা এর মত ও যদি মা পেতাম তাহলে বোধহয় আমাদের আর কোনো কিছুই অপূর্ণ থাকতো না। সব কিছুতেই আমাদের দোষ দেখেন এমন কথা বলেন আর ভাল লাগে না রে"। আমি শুনে অবাক নিজের মা ও এই রকম হয়। পিঙ্কি দি আমাকে দেখে বলেন, "এত ভাবিস না আমি খুব ভাল আছি তোর মত একটা বোন পেয়েছি আর তোর দাদার মত একজন মানুষ কে জীবনসঙ্গী পেয়েছি আর কী চাই বল"। বাইরে এত বৃষ্টি আমার চোখেও যেন বৃষ্টি বইছিল পিঙ্কি দির কথা শুনেও চোখে বৃষ্টি বইছে কিন্তু এই বৃষ্টি আনন্দের। আজকের যুগে এত ভেজাল প্রেমেও ওনাদের প্রেম কত পবিত্র সত্যিই কত ভাল আছেন ওনারা অনেক কিছু অপূর্ণতার মধ্যেও যেন ওনাদের সব আছে। আসলে ভাল থাকতে গেলে বোধহয় অনেক কিছু লাগে না ভালোবাসা বিশ্বাস আর সাপোর্ট এইটুকুই যথেষ্ট। পিঙ্কি দি আর সুব্রত দা কে যেন ভগবান দুজন দুজনের জন্যই তৈরি করেছেন। খুব ভাল থাকুক ওনারা এইভাবেই দুজনের দুজনের ভালোবাসাতে সাপোর্ট হয়ে।