গল্প : শপিং প্রেম
ব্যালকনিতে সুব্রতর হাতে দিয়ে ঝিনুক বলে, "শোনো না এবার দুর্গা পুজোতে কলকাতা তে ঠাকুর দেখতে যাবো, কতোদিন যায়নি। দুই মা বাবা তুমি আর আমি সারারাত ঠাকুর দেখবো বাইরে খাবো কী মজা"। ঝিনুক কথা বলতে বলতে খেয়াল করে সুব্রত পেপার পড়ে যাচ্ছে, ঝিনুক হাত থেকে পেপারটা কেড়ে নিয়ে বললো, "সারাদিন অফিসে থাকো এই সময়টা একটু কথা হয় রাতে তো পরেরদিন অফিস আছে বলে ঘুমিয়ে পরো, এখন একটা কথা বলছি তখনও পেপারে মুখ গুজে বসে আছো"।
এতো রাগ করেনা আমি সব শুনতে পেয়েছি কিন্তু মা বাবারা কি সারারাত পারবেন?
খুব পারবে আমার কথা হয়ে গেছে সবাই রাজি শুধু একটা বড়ো দেখে গাড়ি দেখতে হবে।
কিন্তু ঝিনুক তোমাকে কলকাতা নিয়ে যেতেই ভয় লাগে আবার যে কী হবে কখন।
সেই গো শুধু আমি ভুল করেছিলাম তুমি মনেহয় কিছু করোনি।
আমি ও তো করেছি তোমাকে খুঁজে তোমার জামা কাপড়গুলো দিয়ে এসেছি।
"ও আচ্ছা", বলে মজার ছলে ঝিনুক পেপারটা দিয়ে সুব্রতকে মারতে থাকে। সুব্রত ছুটে ভিতরে চলে যায়।
ঝিনুক আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কথা ভাবতে থাকে। ঠিক এই সময় দুর্গা পুজোর আগে আগে বন্ধুরা মিলে পুজোর শপিং করতে যায়। বাড়ি থেকে অবশ্য বারন করেছিল চন্দননগর থেকে কলকাতা একা একা শপিং করতে যাওয়া নিয়ে। সকাল সকাল গিয়ে বিকেলের মধ্যে ফিরে আসবে এই বলে অনেক কষ্টে বাড়িতে বুঝিয়ে বলে তারপর যায়। বন্ধুরা মিলে একা একা গেছে শপিং করবে না ঘুরবে, ঠিক তাই হল ঘুরতে ঘুরতে সেলফি তোলা খাওয়া এইসব করতে করতে দুপুর হয়ে যায় শপিং করার কথা ভুলেই যায়। এইদিকে এতো ঝামেলা করে শপিং করতে এসে যদি কিছু না কিনে বাড়ি ফেরে তাহলে অবস্থা খারাপ। তাড়াতাড়ি করে একটা দোকান ঢুকে ড্রেস দেখতে থাকে। কাচা হলুদ রঙের একটা ল্যাহেঙ্গা খুব পছন্দ হয় ঝিনুকের। ওই ল্যাহেঙ্গা টা কেনে অষ্টমীর রাতে পরবে বলে, তার সাথে একটা ঢাকায় শাড়ি কেনে অষ্টমীর সকালে অঞ্জলি দেবে বলে তার সাথে কয়েকটা কুর্তিও কেনে। এতো তাড়াতাড়ির মধ্যে শপিং করেও ঝিনুক খুব খুশি বিশেষ করে ল্যাহেঙ্গাটা ওর খুব পছন্দ হয়েছে। বাড়িতে যখন এসে মা বাবাকে দেখাতে যায় তখন দেখে ছেলেদের বারমুডা, গেঞ্জি, শার্ট, পাঞ্জাবী, জিন্স এইসব। ও তো এইগুলো দেখে অবাক হয়ে যায়। ঝিনুকের বাবা বললেন, "চন্দননগরের কোনো দোকান হলে চেনা ছিল তাও ব্যবস্থা করা যেতো কিন্তু কলকাতা এতো বড় শহর কে চিনবে আর কে বিশ্বাস করবে"। ঝিনুকের তো খুব মন খারাপ বকা খাওয়ার থেকেও এতো সুন্দর সুন্দর ড্রেস আবার ওই পছন্দের ল্যাহেঙ্গা সব কোথায় চলে গেলো।
এইদিকে সেইদিন সুব্রতও শপিং করতে যায় বাড়ি এসে দেখে শাড়ি, কুর্তি, ল্যাহেঙ্গা সব ওর কাছে। সুব্রতর মনে পড়ে দোকানে একটা মেয়ে তাড়াতাড়ি করে বেড়োয় তখনই ওর সাথে ধাক্কা লেগে হাতে থাকা সব প্যাকেটগুলো পড়ে যায়। মেয়েটা তাড়াতাড়ি করে প্যাকেটগুলো নীচ থেকে তুলে চলে যায়। এরপর সব ওর কাছে পরিষ্কার হয় প্যাকেটগুলো ওর সাথেই চেঞ্জ হয়। কিন্তু সুব্রত ওকে কী করে খুঁজে পাবে এই চিন্তাই পড়ে যায়। ঝিনুকের এতটাই মনখারাপ যে সেই ঘটনাগুলো ওর খেয়ালই নেই। এই ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর সুব্রত ফেসবুকের স্টোরি দেখতে গিয়ে একটা মেয়ের ছবি দেখে কিন্তু দেখে পেরিয়েও যায় চেনা লাগে বলে আবার ওই ছবিটা দেখে সেইদিনের শপিং করতে গিয়ে যেই মেয়েটার সাথে ধাক্কা লাগে সেই মেয়েটা স্টোরি দিয়েছে। এতোদিন ধরে ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিল কিন্তু ও জানতই না অবশ্য কতো চেনা অচেনা বন্ধু ফেসবুকে থাকে সব কী আর খেয়াল থাকে। সুব্রত ম্যাসেঞ্জারে ঝিনুক কে ম্যাসেজ করে আবার এটাও ভাবে ম্যাসেঞ্জারে তো সবাই রিপ্লাই ও দেয় না তার মধ্যে অচেনা দেখলে তো আরোও রিপ্লাই দেবে না। সকালের দিকে সুব্রত ম্যাসেজ করে রাতেও সেটা ঝিনুক সিন করেনা এইদিকে ফেবুতে অ্যাক্টিভ ছিল। আর না পারতে ঝিনুকে যখন ফেবুতে অন দেখে সঙ্গে সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে ফোন করলো। ঝিনুক ফোনটা কেটে দিয়ে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ করে বলে, "মেয়ে দেখলেই ম্যাসেজ বা ফোন করতে হয় বলুন। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সসেপ্ট করেছি মানে এই না যা ইচ্ছে করবেন"। সুব্রত রেগে গিয়ে ম্যাসেজ করলো, "এই যে ম্যাডাম আপনার সাথে গালগপ্পো করার জন্য ম্যাসেজ বা ফোন করেনি। সেইদিন আপনার সাথে ধাক্কা লেগে ড্রেসগুলো পরিবর্তন হয়ে যায় আজ ফেবুতে আপনার স্টোরি দেখে চিনতে পারি তারপর ড্রেসের ছবিগুলোও পাঠায়। আপনাকে আমি সকালেও ম্যাসেজ করেছি দেখুন একবার। ঝিনুক লজ্জা পেয়ে যায় ক্ষমা চেয়ে কাল বিকেলে দেখা করবে ঠিক করে। ঘটনাচক্রে ওরা দুইজনই চন্দননগরে থাকে। পরেরদিন ড্রেসগুলো পেয়ে ঝিনুক খুব খুশি সুব্রতকে বললো, সেইদিন ওই ব্যবহারের জন্য সরি আমি সত্যিই খুব অন্যায় করেছি। আপনি কতো বড়ো হেল্প করলেন অনেক অনেক থ্যাঙ্ক ইউ। এই ল্যাহেঙ্গাটা না পেলে পুজোতে আমার যে কী হতো। ঝিনুকের সরলতা দেখে সুব্রতর ওকে খুব ভালো লাগে। সেইদিনের পর পুজোতেও ওরা একদিন ঘুরতে বেড়োয়। সেইদিনের ওই বন্ধুত্ব আজ দাম্পত্যে পরিণত হয় এবং ওরা খুব সুখেও আছে।
সুব্রতর ডাকে হুঁশ ফেরে ঝিনুকের। সুব্রত বললো, "কী ভাবছো ম্যাডাম সেই শপিং এর কথাগুলো"।
তুমি কী করে জানলে?
আমি তো আমার এই ক্ষেপুটাকে চিনি সে কখন কী করে আমি সব বুঝতে পারি। সেইদিনের এই সরল মেয়েটারই আমি প্রেমে পড়েছিলাম আর সেই সরলতা এখনোও তোমার মধ্যে আছে।
তাই বুঝি মশাই কিন্তু এটা ঠিক সেইদিনের পুজোর শপিং এ এই মজার ঘটনাটা ঘটেছিল বলেই আজ আমরা এক হতে পেরেছি।