Logo
logo

গল্প / কাহিনী

মনখারাপের বৃষ্টি

প্রচন্ড গরমের পর যখন বৃষ্টি এল সারা রাজ্যবাসীর কাছে যেন প্রাণ ফিরে এলো। প্রচন্ড গরমও পরেছিল। কিন্তু এই বৃষ্টি অনেকদিন অবধি চলছে, সেইজন্য আর ভাল লাগছে না কারোর। এইরকম ভাবেই প্রমীলা দেবীরও বিরক্ত লাগছে এই বৃষ্টি। জামাকাপড় শুকোচ্ছে না একদম, সবথেকে বড় কথা ঘরে আনাজ পর্যন্ত নেই। প্রমীলা দেবীর স্বামী অর্জুন বাবু এক সপ্তাহের বাজার করে ব‍্যাঙ্গালোরে গেছেন কনফারেন্স এর জন‍‍্য। কিন্তু এই দিকে প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়ার জন‍্য ফ্লাইটও ক‍্যানসাল করা হয়েছিল তাই আসতে পারেননি। বৃষ্টি যখন একটু স্বাভাবিক হলো, তখন ফ্লাইট আবার ছাড়া হয়। অনেকদিন পর অর্জুন বাবু বাড়ি ফিরছেন, প্রমীলা দেবীও নিশ্চিন্ত হলেন। আগামীকাল বাজার করে আনবেন অর্জুন বাবু, মেয়েটারও অনেক দিন ধরে ঠিকমতো খাওয়া হচ্ছে না। একা মেয়ে বলে এই বৃষ্টিতে মেয়েকে বাজারে যেতে দিতেও ভয় পাচ্ছিলেন। প্রমীলা দেবীর মেয়ে তৃষা বাজার যাওয়ার জন‍্য জেদ ধরলে প্রমীলা দেবী এক ধমকে থামিয়ে দেন।

আজ খিচুড়ি করেছেন প্রমীলা দেবী, ভেবেছেন অর্জুন বাবু বাড়ি এলে ডিমের অমলেট গরম গরম করে দেবেন। আজ রাতে এইটুকুই ব‍্যবস্থা করেছেন। কিন্তু অর্জুন বাবু বাড়ি আসতেই তৃষা বায়না ধরে, "বাবা আর পারছি না এই খাবার খেতে তুমি আজ মাংস নিয়ে এসো।"

অর্জুন বাবু বললেন "মাংস তো আনবোই, কিন্তু তোর মা বললেন খিচুড়ি করেছেন। ইলিশ নিয়ে আসি। খিচুড়ির সাথে ইলিশ মাছ ভাজা এই বৃষ্টিতে জমে যাবে"।

প্রমীলা দেবী শুনে বললেন "কোনো দরকার নেই আমি খিচুড়ির সাথে ডিম ভাজবো ওটাই খাও। আর তৃষা তোর কোনো কান্ডজ্ঞান নেই বাবা এখনই এলেন এই বৃষ্টির মধ‍্যে, আবার বেরোতে বলছিস? আগামীকাল একদম বাজারে যাবে।

উফফফফ তুমি থামো তো প্রমীলা! আমার মেয়ে খেতে চেয়েছে আমি আনবো না? তুমি ডিম ভাজো আর আমি ইলিশ আনছি তার সাথে। ইলিশ মাছ ভাজা খিচুড়ির সাথে জমে যাবে আর আগামীকাল ভাপা ইলিশ আর চিকেন কষা হবে। আমি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি কোনো অসুবিধা হবে না।

অর্জুন বাবু গাড়ি নিয়ে বাজারে গেলেন গাড়ি থাকলেও কী হবে? গাড়ি থেকে নেমে অনেকটা হেঁটে বাজারে যেতে হচ্ছে এতো জল জমেছে। আজ বৃষ্টি কমতে মোটামুটি একটু বাজারে ভীড় হয়েছে, এতোদিন পর বাজারে লোক আসতে দেখেও বিক্রেতারা খুব খুশি। এতোদিন বৃষ্টির জন‍্য তারাও বসতে পারেনি, আজ কোনোমতে মাথার উপরে ছাতা টাঙিয়ে বসেছে তাতেই লোক দেখে খুব খুশি। অর্জুন বাবু কোনোমতে হাঁটছে, কোথাও জল জমেছে তো কোথাও কাদা। কোনোমতে বাজারের দিকে আসাতেই দেখছে কী দাম সবজির!মাছ কী কিনবে হাত দেওয়া যাচ্ছে না! অর্জুন বাবু বললেন, "একটু কম কর, এত দাম বলছো?"

বাবু দাম কম করার কথা বলবেন না, অবস্থা খারাপ আমাদের, এতোদিন তো বসতেই পারিনি আর এই বৃষ্টির জন‍্য সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

একজনকে দেখা গেল ইলিশেরএত দাম দেখে আর নিলেন না। বলতে বলতে যাচ্ছেন, "মধ‍্যবিত্তদের ইলিশ খাওয়ার দিন শেষ। সামান‍্য সবজিরও এতো দাম! ভগবান একটু মুখ তুলে তাকাও! খেয়ে অন্তত বাঁচতে পারি। যা দাম সবকিছুতে না খেয়ে মরতে হবে। অর্জুনবাবু বাজারের ভিতরে আর একটু হেঁটে দেখলেন বস্তিগুলোর ভিতরে পুরো জল জমে গেছে। কোনোমতে বেঁচে আছেন বস্তির লোকজন। এইসব দেখে অর্জুনবাবুর মন খারাপ হয়ে গেল। এই অবস্থায় ইলিশ কেনাটা মনে হচ্ছে বিলাসিতা, কিন্তু মেয়েটাকেও বলে এসেছে ইলিশ নিয়ে যাবে। তারপর ভাবলেন তৃষা তো মাংস খেতে চেয়েছে, ও চিকেন খুব ভালোবাসে, সেটা তুলনামূলক সস্তা। চিকেন আর কিছু প্রয়োজনীর সবজি কিনে ইলিশের জন‍্য যে টাকা রেখেছিলেন বস্তির মানুষদের ভাগ করে বললেন, "এই সামান‍্য টাকা রাখো কিছু খেয়ে নিও তোমর।" বস্তির মানুষরা তো খুব আনন্দ ও আশীর্বাদ করে বললেন "আপনার ভাল হোক বাবু,ঈশ্বর মঙ্গল করুক।"

বাড়ি ফিরে প্রমীলা দেবীর হাতে ব‍্যাগটা দিয়ে বললেন, আজ খিচুড়ির সাথে শুধু ডিমটাই ভাজো। আগামীকাল চিকেন কষা করো। তৃষা শুনে বললো "আর ইলিশ বাবা?"

-"বাজারে আগুন দাম মা! একটু দাম কমুক তারপর তোমাকে খাওয়াবো।"

-"দাম হলেও তোমার তো টাকা আছে বাবা তুমি তো কিনতেই পারতে।"

-"আমার টাকা থাকলেও তোমাকে বুঝতে হবে তৃষা, দেশের বেশিরভাগ মানুষের এই অবস্থায় ইলিশ তো দূরের কথা সবজি কেনার মত ক্ষমতা নেই। তোমার জন‍্য চিকেন এনেছি অনেকে এটাও খেতে পারছেন না। বস্তির মানুষদের কী অবস্থা দেখেছ ?জলে ডুবে গেছে পুরো বস্তি। আমি ওনাদের কিছু টাকা দিয়ে এসেছি যাতে ওনারাও খেয়ে বাঁচতে পারেন।"

প্রমীলা দেবী ব‍্যাগটা রেখে বললেন, "একদম ঠিক করেছো, মানুষের খেতে পরতে বেশি টাকা লাগে না বাকিটা বিলাসিতা, কত মানুষ এইগুলোই পারছে না। আমাদেরও এই সমাজের জন‍্য ও কিছু কর্তব্য আছে।"

তৃষা বাবা মা এর কাছে গিয়ে বললো, "তোমরা যেদিন ইলিশ খাওয়াবে আমি সেইদিনই খাবো। আর এটা খাবো না ওটা খাবো না বলবো না, মা তুমি যা দেবে আমি তাই খাবো আমি বুঝিনি এতো খারাপ অবস্থাতেও মানুষ আছেন।"

প্রমীলা দেবী আর অর্জুনবাবু মেয়ে কে কাছে টেনে বললেন, "এই তো আমাদের লক্ষ্মী মেয়ে, জানতাম তুই ঠিক বুঝবি।"

Contact US

Tel: 9903329047 / 8697419047
Email: sreemotirdarbar@gmail.com